এমনিতেই গভীর সংকটে নিমজ্জিত পাকিস্তান ক্রিকেট। সেখানে হঠাৎ করেই বুধবার সাদা বলের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন বাবর আজম। তার এই ঘোষণায় দেশটির ক্রিকেটে সংকট আরও ঘণীভূত হলো।
Advertisement
দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা কঠোর সমালোচনা করে মতামত দিয়েছেন যে, বর্তমানে পাকিস্তানের ক্রিকেট রয়েছে পুরোপুরি আইসিইউতে। এমন কোনো বিশেষজ্ঞ নেই, যিনি এখন এই মুমূর্ষ অবস্থা থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটকে বাঁচাতে পারেন।
পাকিস্তান ক্রিকেটে সংকট সৃষ্টি হযেছে মূলত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই। সেবার খুব বাজে পারফরম্যান্সের কারণে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বাবর। ঠিক তিনমাস পর আবারও নেতৃত্বে ফেরেন। তবে দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসাটা বাবরের জন্য শুভকর হয়নি।
কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লজ্জাজনকভাবে হারতে হয়েছিল। বিদায় নিতে হয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে নিশ্চিত জয়ের অবস্থানে থেকেও পরাজিত হতে হয়েছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট যে ধীরে ধীরে তলানিতে নামছে, তার সর্বশেষ উদাহরণ ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হার।
Advertisement
এসব কারণে তুমুল সমালোচনার মুখে পাকিস্তান ক্রিকেট দল এবং অধিনায়করা। এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ সংযোজন বাবরের অধিনায়কত্ব থেকে পতদ্যাগ। এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে বাবর লিখেন, ‘প্রিয় সমর্থকরা, আমি কিছু নিউজ শেয়ার করবো আজ আপনাদের সাথে। আমি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গত মাসেই এ বিষয়ে আমি পিসিবি এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দেয়া সত্যিই এক সম্মানের কাজ। তবে এখনই সেরা সময় আমার সরে দাঁড়ানোর এবং নিজের খেলার দিকে ফোকাস করার। অধিনাকত্ব অবশ্যই একটি সম্মানজনক অভিজ্ঞতা। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের বোঝা (ওয়ার্কলোড) তৈরি করে। আমি আমার পারফরম্যান্সকে প্রায়োরিটি দিতে চাই। নিজের ব্যাটিং উপভোগ করতে চাই এবং পরিবারের সাথে ভালো সময় কাটাতে চাই। যা আমার মধ্যে আনন্দ তৈরি করবে।’
বাবরের পদত্যাগে পাকিস্তান ক্রিকেটে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাবেক উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক রশিদ লতিফ পাকিস্তান ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থাকে বর্ণনা করছেন নেতৃত্বের সঙ্কট হিসেবে। এএফপিকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট পুরোপুরি আইসিইউতে চলে গেছে। যেখান থেকে উত্তরণের কোনো চিকিৎসক আপাতত নেই।’
বাবরের দ্বিতীয়বার নেতৃত্ব নেয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে রশিদ লতিফ বলেন, ‘তার পূনরায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব গ্রহণ ঠিক হয়নি। এমনকি দলের ভালো পারফরম্যান্স কিংবা খারাপ পারফরম্যান্স যাই হোক না কেন। কিংবা সে কোনো বড় স্কোর করতে পেরেছে কি না- তাতেও নয়। তার (বাবরের) এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আসলো অনেক দেরিতে। এটা তাকেই শুধু ক্ষতির মধ্যে ফেলেনি, ফেলেছে পুরো দলকেও।’
Advertisement
একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলি জানান, সঠিক সময়েই বাবরের পদত্যাগের সিদ্ধান্তটা এসেছে। তিনি বলেন, ‘বাবরের পদত্যাগের এই সিদ্ধান্তটা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। ইনফ্যাক্ট, ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরপরই তার এটা করা উচিৎ ছিল। এ সিদ্ধান্ত শুধু পাকিস্তান ক্রিকেটেরই উপকার করবে না, বাবরের নিজেও উপকৃত হবে এতে। এটা একটা খুবই সাহসী সিদ্ধান্ত হলো। যা তাকে নিজের খেলার দিকে পূনরায় মনযোগ দিতে সাহায্য করবে।’
সাবেক অধিনায়ক সালমান বাটও বাবর আজমের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাবর আজম সাদা বলের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেছে। আমি মনে করি, এটা নিয়ে কিছুই বলার নেই। আমার মনে হয়, সে সঠিক কাজটিই করেছে। তবে, আরও আগেই এ সিদ্ধান্তটা নেয়া উচিৎ ছিল। নিজের ব্যাটিংয়ের দিকে আরও বেশি মনযোগি হওয়া উচিৎ তার। যা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জন্যই সবচেয়ে বেশি উপকারী হবে।’
আইএইচএস/