বিনোদন

অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ রাখি না: জ্যোতিকা জ্যোতি

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আলো আসবেই’ নামের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের চ্যাট ফাঁস হয়। যে গ্রুপে যুক্ত ছিলেন দেশের নামকরা কয়েকজন তারকা, যা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। যদিও এরই মধ্যে কয়েকজন শিল্পী ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে যুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তবে বেশির ভাগ শিল্পীই নীরব।

Advertisement

ফেসবুক লাইভে এসে পুরো বিষয়টি নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরলেন জ্যোতিকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এতদিন কথা বলিনি। কিন্তু আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। কারণ, আমাকেসহ ওই গ্রুপের সবাইকে সামাজিক কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনই করতে পারছি না। বলতে পারেন সামাজিক হেনস্তার শিকার হচ্ছি। তাই একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আমি আমার জায়গাটি পরিষ্কার করতে ফেসবুক লাইভে এসেছি।’

আরও পড়ুন ফারুকীকে আশাবাদী করেছে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ  আলো আসবেই গ্রুপে থাকা সদস্যদের ক্রমে নোটিশ দেবে শিল্পীসংঘ 

যারা ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে ছিলেন তাদের আপনারা দুটি তকমা দিয়ে কথা বলছেন ইদানীং। একটি হলো স্বৈরাচারের দোসর, আরেকটি হলো গণহত্যার ইন্ধনদাতা! এই দুটি কথার মানে কি আপনারা জানেন? আমরা কি করেছি যে এ ধরনের কথা শুনতে হবে? আমি আজ থেকে আর একটিবারের জন্যও এই অপবাদ নিজের কাঁধে নিতে চাই না বলেই কথাগুলো বলতে এসেছি। আমি যে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তার কোনো প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে? না থাকলে এসব কথা কেন বলছেন? আপনারা কি জানেন, এই ধরনের অপবাদ মানুষের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে? আমি তার সহ্য করতে না পেরে আজ কথাগুলো বলছি।”

জ্যোতি আরও বলেন, ‘একে তো আমি নারী, আজকাল দেশে নারীদের কোনো সম্মান নেই। তার ওপর আমি অভিনেত্রী, তাতে তো আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা আরও সহজ! সেই সাথে আমি হিন্দু, আমি অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ রাখি না- এই সবকিছুতেই তো আপনাদের সমস্যা। এজন্য এমনিতেই আমি নানা ধরনের চাপের মধ্যে আছি। কিন্তু যে কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই তার জন্য দয়া করে আমাকে অপবাদ দিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না। এটুকু অনুরোধ থাকলো সবার প্রতি।’

Advertisement

ওই গ্রুপে থাকা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন যেসব শিল্পী, তারাই ওখানে ছিলেন। এটা আমি ইনিয়েবিনিয়ে বলব না যে, আমাকে কেন অ্যাড করেছে, কে অ্যাড করেছে জানি না। আমি জেনেশুনেই ছিলাম গ্রুপটিতে। কারণ, আমি জানতাম, ওই গ্রুপের এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই যা আমাদের দেশের বা দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। যেকোনো ছোট ছোট বিষয়ে আমরা গ্রুপ খুলি। এটাও তেমন একটা গ্রুপ। এখানে আমি সবসময় ঢাকার কোথায় কি অবস্থা সেসব আপডেট দিতাম। কারণ, আমাদের তো পরিস্থিতি বুঝে ঘরের বাইরে বেরোতে হতো। দু-একজনের দু-একটা কথা হয়তো আপনারা ক্ষতিকর মনে করছেন। কিন্তু সেই কথাগুলো কোন পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে সেটা আপনারা জানেন না। কোনো শিল্পী কখনোই মানুষ হত্যার সমর্থন করতে পারে না, এটা আপনারা ভুলে গেছেন।’

জ্যোতি আরও বলেন, ‘আমি সে সময় দুটি মাত্র প্রোগ্রামে গিয়েছি। একটি বিটিভিতে হামলার প্রতিবাদ করতে, অন্যটি আন্দোলনে যে ছাত্ররা আহত হয়েছে তাদের হাসপাতালে দেখতে। কিন্তু আপনারা ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টি কেউ সামনে আনলেন না, আনলেন বিটিভির বিষয়টি। আমরা তো সেখানে গিয়েছিলাম সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে। এটা তো দোষের কিছু নয়। আমরা সবসময় বলে এসেছি যে, এই ধরনের ধংসযজ্ঞ ছাত্ররা করতে পারে না। ছাত্রদের মধ্যে একদল সুবিধাবাদী ঢুকে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করেছে। তাহলে আপনারা কেন আলো আসবেই গ্রুপের শিল্পীদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন? অহেতুক আপনারা এই গ্রুপটিকে নিয়ে নানা রংচং মাখিয়ে শিল্পীগুলোকে ক্ষতির মুখে ফেলেছেন।’

জ্যোতিকা জ্যোতি ছাড়াও ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে ছিলেন- রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাস, ফেরদৌস, রিয়াজ আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, আশনা হাবীব ভাবনা, জামশেদ শামীম, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সাজু খাদেম, হৃদি হক, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, লিয়াকত আলী লাকী, নূনা আফরোজ, রওনক হাসান, আহসানুল হক মিনু, পরিচালক গুলজার, নির্মাতা এস এ হক অলীকসহ অনেকে।

এমআই/এমএমএফ/জিকেএস

Advertisement