শুরুটা সাত বছর আগে। তাও মাত্র ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে। স্বামীর বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরোনো মুরগির খামারে শুরু করেন মুরগি পালন। সময়ের ব্যবধানে সেই খামার বেড়ে হয়েছে ৯টি।
Advertisement
শুধু তাই নয়, ৫০০ মুরগি থেকে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার। বর্তমানে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। করেছেন ছয়টি পরিবারের কর্মসংস্থান। কিনেছেন জমি। তুলেছেন দুটি পাকা বাড়ি। হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক।
বলছিলাম শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের চরমধ্যপাড়া এলাকার গৃহবধূ ফাতেমা বেগমের কথা। তার বাবার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল এলাকায়। ২০০৭ সালে ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয় শরীয়তপুরের তারিকুল ইসলামের সঙ্গে। তারিকুল ইসলাম একসময় পোলট্রি মুরগির খামার করলেও লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ করে দেন। এরপর ঢাকায় একটি কোম্পানিতে যোগ দেন।
সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন ফাতেমা। স্বামীর ফেলে রাখা সেই খামারটিতে নতুন করে স্থানীয় এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫০০ লেয়ার মুরগির বাচ্চা কেনেন। দেখতে থাকেন লাভের মুখ। প্রতিবছর যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে খামার বাড়াতে থাকেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন ফাতেমার বড় বড় ৯টি খামার রয়েছে। যেখানে মুরগি রয়েছে ৯ হাজার।
Advertisement
খামারগুলো দেখাশোনা করেন ছয়জন শ্রমিক। প্রতিদিন তার খামার থেকে বিক্রি হয় অন্তত ৭০ হাজার টাকার ডিম। প্রতিমাসে আয় তিন লাখ টাকা। কিনেছেন ১৯৮ শতাংশ জমি আর গড়েছেন দুটি পাকা বাড়িও।
ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে মুরগি লালন-পালন করেছি। বিয়ের পর দেখি স্বামীর পুরোনো খামারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে সেটি পরিষ্কার করে একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ৫০০ মুরগির বাচ্চা কিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমার ৯টি খামার এখন ৯ হাজার মুরগি।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। আমি আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। অন্তত তিন কোটি টাকার মালিক হয়েছি এই মুরগি পালন করে। আমি বলতে চাই, নারীরা সমাজের বোঝা নয়, তারা চাইলেই আমার মতো সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন।’
ফাতেমা আক্তারের স্বামী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সবসময় আমার স্ত্রীর পাশে থেকে তাকে সাহস জুগিয়ে গেছি। আজ সে একজন সফল উদ্যোক্তা। আমাদের এই খামার থেকে পুরো জেলায় এখন প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার ডিম যায়।’
Advertisement
প্রতিবেশী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘ফাতেমা ভাবি ছোট খামার থেকে আজ বড় কয়েকটি খামারের মালিক। আমার বাড়িতেও ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে। আমি সেখানে তার মতো মুরগির খামার করতে চাই।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ফাতেমা বেগম চাকরির পেছনে না ছুটে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। শুধু মুরগি পালন করে আজ তিনি তিন কোটি টাকার মালিক। আমি মনে করি, নারীরা যদি এভাবে এগিয়ে এসে উদ্যোক্তা হন, তাহলে সমাজে দারিদ্র্য বিমোচন হবে। আমরা সবসময় এসব নারীর পাশে রয়েছি।
বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জিকেএস