হাইতিতে চলমান সহিংসতার কারণে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্যারিবীয় দেশটির ৫৪ লাখ ১০ হাজার মানুষ ‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগবে।
Advertisement
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই বিপুল সংখ্যার মধ্যে প্রায় ছয় হাজার মানুষ ‘ভয়াবহ মাত্রার ক্ষুধা’ অনুভব করছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং সশস্ত্র গ্যাংগুলোর হামলা হাইতির খাদ্য সরবরাহ ও নাগরিক জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
অব্যাহত সহিংসতা এবং শাসন ব্যবস্থার ভঙ্গুরতাহাইতি বহু বছর ধরেই অস্থিরতার শিকার। গত ফেব্রুয়ারিতে সশস্ত্র গ্যাংগুলো দেশটির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বিভিন্ন কারাগার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালায়। যদিও আন্তর্জাতিক সহায়তায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার অভাব ও সহিংসতা এখনো থামেনি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, হাইতিতে ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে কমপক্ষে ৩ হাজার ৬৬১ জন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। সহিংসতা এতটাই ব্যাপক যে, পোর্ট-অ-প্রিন্স এবং এর আশপাশের অঞ্চলগুলোতে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে বহু পরিবার পর্যাপ্ত খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
Advertisement
সহিংসতার কারণে পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। আইপিসির মতে, বর্তমানে হাইতির পরিবারগুলোর মোট ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই খাদ্যের পেছনে ব্যয় হচ্ছে।
শুধু সহিংসতা নয়, ২০১৬ সালের হারিকেন ম্যাথিউ এবং ২০২১ সালের ভূমিকম্পের মতো জলবায়ু বিপর্যয়গুলোর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবও হাইতির খাদ্য সংকটকে আরও খারাপ করেছে।
গ্যাং সহিংসতার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাপোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল এবং উত্তর ও দক্ষিণ হাইতির প্রধান রাস্তাগুলো এখনো গ্যাংদের নিয়ন্ত্রণে। এটি মানবিক সহায়তা ও খাদ্য সরবরাহে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। জাতিসংঘ-সমর্থিত কেনিয়ার নেতৃত্বে একটি মিশন শুরু হওয়ার পর কিছু অঞ্চল গ্যাংমুক্ত করা হয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।
আইপিসি সতর্ক করে বলেছে, হাইতিতে সহিংসতা ও খাদ্য সংকট আগামী মাসগুলোতে আরও তীব্রতর হতে পারে।
Advertisement
সূত্র: আল-জাজিরাকেএএ/