আহত অবস্থায় ঈগলটি উদ্ধার করে সেবা-শুশ্রুষায় সুস্থ করে তুলেছিলেন প্রাণিপ্রেমী রাজবাড়ীর সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী। পরে পাখিটি প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার আগেই হঠাৎ একদিন সবার অগোচরে উড়ে চলে যায়। এরপর পাখিটির আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন লিটন চক্রবর্তী। ভাবেননি কখনো আবার এর দেখা পাবেন। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সম্প্রতি ঈগলটি ফিরে এসেছে লিটন চক্রবর্তীর কাছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথমদিকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির ঈগলটি ডানা ভাঙা অবস্থায় উদ্ধার করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক জানান, পাখিটি বেশ কিছুদিন নিজেদের হেফাজতে রেখে পরিচর্যা ও চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু সেরকম কোনো ব্যবস্থাপনা তাদের নেই। এসময় ওই বন কর্মকর্তা প্রাণিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত লিটন চক্রবর্তীর কাছে আহত ঈগলটি সেবা-শুশ্রুষার জন্য হস্তান্তর করেন। পরে লিটন চক্রবর্তী তার আরাম ঘরের (শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্র) একটি কক্ষে ঈগলটি রেখে পরিচর্যা করতে থাকেন।
প্রায় দুই মাস পর ঈগলটি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে সবার অগোচরে উড়ে চলে যায়। সম্প্রতি পাখিটি আবার ফিরে এসেছে। এখন ঈগলটি পরিচর্যার পাশাপাশি দিনে দুই থেকে তিনবার মাছের পোনা ও মুরগির মাংস খাওয়াচ্ছেন লিটন চক্রবর্তী।
সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী জেলা শহরের টিএনটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি একজন প্রাণী ও সাংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। তার প্রতিষ্ঠিত আরাম ঘরে শিশুরা নিয়মিত সংস্কৃতির চর্চা করে। আরাম ঘরের সদস্যদের সহযোগিতায় তিনি ঈগলের পাশাপাশি একটি ঘোড়া ও একটি বিদেশি কুকুর লালন-পালন করছেন। এর আগেও কোকিলসহ বিভিন্ন আহত পশু-পাখিকে এনে সুস্থ্ করে অবমুক্ত করেছেন এই সাংবাদিক।
Advertisement
আরাম ঘরের সদস্য শামীম আহম্মেদ, রেজাউল কবির ও রেজোয়ান হোসেন বলেন, ‘লিটন চক্রবর্তীর মন-মানসিকতা পাখিদেরও আকৃষ্ট করেছে। যে কারণে দুই মাস পর ঈগলটি আবার ফিরে এসেছে।’
স্থানীয় সুমন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আসলে প্রকৃতিকে ভালোবাসলে সে মানুষকেও ভালোবাসে। ঈগল এখন মানুষকে শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবতে শুরু করেছে। প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হলে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে।’
কথা হয় প্রাণিপ্রেমী লিটন চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈগলটি এখন অনেকটাই সুস্থ, খাবার খাচ্ছে। দিনে কয়েকবার তাকে মাছের পোনা ও রাতে মুরগির মাংস দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈগল মানুষ দেখলে কিছুটা ভয় পায়। সে কারণে তাকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ঈগলটি দেখতে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন মানুষ আসে।’
Advertisement
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সব প্রাণীই ভালোবাসার কাঙাল। তারই একটি নিদর্শন ঈগল। দুই মাস পর পাখিটি আবার ফিরে এসেছে।’
রুবেলুর রহমান/এসআর/এএসএম