সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এম. মাসুদ রানা।
হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ বছর হাজতবাসকালীন তার বিরুদ্ধে মোট ৫৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন হাজতবাস করায় এবং মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও নিষ্পত্তি শেষ না হওয়ায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে।
একই সঙ্গে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। আগে রানাকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে জামিনের বিরোধিতা করে আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে ছয় মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতকে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় পুনরায় হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন আসামি রানা। সে আবেদনে সাড়া দিয়ে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ জন নিহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা ধসে মারা যান ১ হাজার ১৩৫ জন। ওই ঘটনায় রানাকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলি আশরাফ। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে বিচারিক আদালতে। এখন পর্যন্ত ৯৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ওই সময় পর্যন্ত ভবনটির মালিক সোহেল রানার জামিন স্থগিত থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। জামিন স্থগিত থাকায় সোহেল রানা মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) শুনানির নির্ধারিত দিন ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
Advertisement
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মুনমুন নাহার। ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ, সোহেল রানার জামিন মেলেনি
এর আগে গত বছরের ১০ জুলাই আপিল বিভাগ রানার জামিন আবেদনের বিষয়টি (স্ট্যান্ডওভার) মুলতবি করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।
গত বছরের ৮ মে ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এই সময় পর্যন্ত সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত থাকবে বলা হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
এর আগে এ মামলায় সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর করে (রুল অ্যাবসলিউট) গত ৬ এপ্রিল রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ৯ এপ্রিল চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি ৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় সেদিন বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। সোহেল রানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় একই বছরের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।
অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত করে হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।
এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম