দেশজুড়ে

মুন্সিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

একদিকে রক্ষণাবেক্ষণ অভাব অন্যদিকে সড়কের নিচে থাকা গ্যাস লাইনের লিকেজ। এমন অবস্থায় বেহাল দশায় পরিণীত হয়েছে মুন্সিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ সড়ক। কার্পেটিং উঠে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ। এতে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা।

Advertisement

পৌরসভার তথ্যমতে, খাতা-কলমে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভাটিতে এক লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে। এ জনসংখ্যা ছাড়াও বাইরে থেকে আসা আরও অনেকে সড়ক ব্যবহার করেন। ১০ কিলোমিটার আয়তনে পৌর এলাকায় ৬০ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ অধিকাংশ সড়কেই রয়েছে খানাখন্দ।

মুন্সিগঞ্জ শহরে প্রবেশের প্রধান পথ মানিকপুর-দশতলা সড়ক। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কটির আধা কিলোমিটারের বেশি অংশ জুড়ে অজস্র খানাখন্দ, মানিকপুর এলাকায় বড় অংশে উঠে গেছে পিচ ঢালাই। বৃষ্টি নামলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। স্কুল-কলেজ, কোর্ট-কাচারিসহ নিত্য যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ। মানিকপুরের এই সড়কেই রয়েছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। যা জেলার প্রধান চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

এদিকে শুধু এই সড়ক নয় পৌরসভার অন্যান্য সড়কগুলোরও একই দশা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কগুলোর কোনো সংস্কার হচ্ছে না। এর সঙ্গে আবার সড়কের নিচে গ্যাসলাইনে রয়েছে লিকেজ। লিকেজ থেকে প্রায় গ্যাস বের হওয়া অবস্থা হচ্ছে আরও নাজুক।

Advertisement

মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা আফজল হোসেন বলেন, রাস্তার নিচ দিয়ে গ্যাসলাইনে লিকেজ আছে। সেখান দিয়ে গ্যাস উঠে , রাস্তা ঠিক করলেও কয়দিন পর আবারো যেই সেই। আমরা স্থায়ীভাবে সড়কের সংস্কার চাই। হাজার হাজার মানুষ চলে এই সড়কে।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আখি ইসলাম জানান, মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে আসে এই রোড দিয়ে। তবে রাস্তার এত বেশি খারাপ অবস্থা যে, রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। হাসপাতালে অনেক প্রসূতি নারীও আসে, তাদের তো জীবন যায় যায় অবস্থা। আমরা চাই দ্রুত এই সড়ক ঠিক করুক।

সুপার মার্কেট মোড়ে কথা হয় মিশুকচালক আমির হোসেনের সঙ্গে। রাস্তার খারাপ অবস্থা নিয়ে তারও আক্ষেপের শেষ নেই। রাস্তার ছোট-বড় গর্তে পরে প্রায় তার গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে দাবি তার।

আমির বলেন, এটা একটা শহরের রাস্তা হইলো? কেউ কি দেখে না। পৌরসভার রোলার মেশিন আছে, রাস্তা ঠিক করার সবই তো আছে। তাও ঠিক করে না। গাড়ি নিয়ে বের হলে ঝাঁকুনিতে কোনোদিন ব্যাটারি খুলে পড়ে, কোনোদিন আবার ব্রেক ভাঙে। আমাদের থাকতে হয় চিন্তায়।

Advertisement

স্থানীয় সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ছাত্র ইয়ামিন হোসেন বলেন, এমন ভাঙাচোরা রাস্তায় চলতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় ভাঙার কারণে গাড়ি নষ্ট হলে যানজট তৈরি হয়। আমাদের ঝাঁকুনিও খেতে হয়, আবার দেরিও হয়। আমাদের সবার দাবি শহরের সব রাস্তার টেকসই সংস্কার করা হোক।

ভাঙাচোরা সড়কের বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, পৌরসভার অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত, মানিকপুরে হাসপাতালের সড়কটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। একই সাথে হাটলক্ষ্মীগঞ্জের রেডক্রিসেন্ট ভবন থেকে জেলাপরিষদ সড়কটিও মেরামত প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়কের অস্থায়ী সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর স্থায়ী সংস্কারেরও পরিকল্পনা রয়েছে । পৌর এলাকার সব সড়ক সংস্কার নির্মাণে আড়াইশ কোটি টাকার বিভিন্ন প্যাকেজের পরিকল্পনা চলছে । অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী মাহবুব বলেন, গ্যাস লাইন লিকেজের বিষয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের সাথে সমন্বয় করা হবে। দ্রুত জনভোগান্তির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরাফাত রায়হান সাকিব/জেডএইচ/জেআইএম