রাজনীতি

হেফাজত এখন সরকারের ভালো বন্ধু

৭২-এর সংবিধানে ফেরার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় আসে মহাজোট সরকার। সরকারের ৭ বছর পার হয়েছে। সংবিধানও সংশোধন হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রয়েই গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বা সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযুক্ত করাই হচ্ছে ৭২-এর সংবিধানের সঙ্গে মৌলিক অসঙ্গতি। আদালত যেদিন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে রায় ঘোষণা করে সেদিন মাঠে ছিল হেফাজতে ইসলাম। হরতালের ঘোষণাও করা ছিল সংগঠনটির পক্ষ থেকে। সরকার রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করেনি। হরতালও আর পালন করতে হয়নি হেফাজতকে। প্রচার রয়েছে, নানা ইস্যুতে সরকার এবং হেফাজতে ইসলামের মধ্যে এখন লুকোচুরি চলছে। বিশেষ সখ্য গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই সরকার হেফাজত ইসলামকে নিজেদের স্বার্থে হেফাজত করছে।মাঠের রাজনীতিতে যখন কূলহারা তখন নতুন গড়ে ওঠা অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের ওপর ভর করে সরকার পতনের ফন্দি আঁটে বিএনপি-জামায়াত। এরই ধারাবাহিকতায় বিরোধীজোটের কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীতে সর্বাত্মক অবরোধ গড়ে তোলে হেফাজত। রাজধানীর ৬টি প্রবেশমুখে অবরোধ শেষে ওইদিন দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেত হতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়ে গোটা দেশে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। পুলিশ, র্যা ব, বিজেবির সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন হতাহত হয়। ওইদিন গভীর রাতের সাঁড়াশি অভিযানে মাঠ ছাড়া হয় হেফাজতে ইসলাম। সেই অভিযান নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও সরকারের কৌশলের কাছে আর হালে পানি পায়নি সংগঠনটি। হেফাজতকে ঠাণ্ডা করে বিএনপি-জামায়াতকেও মাঠ ছাড়া করে রেখেছে সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে পরে দু’দফা আন্দোলন করে বিএনপি-জামায়াত এখন অনেকটাই কোমর ভাঙা। তবে জামায়াত-বিএনপির ভঙ্গুর রাজনীতিতে সরকারের মেজাজ ফুরফুরে হলেও হেফাজতকে নিয়ে বেশ কৌশলী। এই মুহূর্তে নতুন কোনো ইস্যুতে সরকার আর হেফাজতকে মাঠে দেখতে চায় না। প্রচার রয়েছে, সরকার বিপদমুক্ত থাকতেই হেফাজতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি হেফাজতের আশীর্বাদ নিতে ঘনঘন চট্টগ্রামও সফর করেন।অনেকেই মনে করেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল সরকারের হেফাজতকে খুশি করার নীতি। হেফাজতের আন্দোলনের ভয়েই সরকার নারী উন্নয়ন নীতি নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। হেফাজত বিরোধী তেমন বক্তব্যও আর দিচ্ছেন না সরকারের লোকজনেরা। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পতন ঘটনানোর আর ক্ষমতা রাখে না। সঙ্গত কারণেই হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে সরকারকে কৌশলী অবস্থান নিতে হয়েছে। আমরা চাই না নতুন কোনো ইস্যু নিয়ে হেফাজত মাঠে নামুক এবং তার সুবিধা অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠন লুফে নিক।’ অপরদিকে হেফাজতে ইসলামও সরকারকে এখন ভালো বন্ধু মনে করছে। নানা দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে সরকার হেফাজতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সংগঠেনের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে সংগঠনটির নেতারা বিশেষ সুবিধাও পাচ্ছেন বলে প্রচার রয়েছে। গত বছরের ১১ এপ্রিল সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে আমির আহমেদ শফী। ওইদিন তিনি আওয়ামী লীগ, সরকার ও ছাত্রলীগকে ‘হেফাজতের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। গত ১৪ জানুয়ারি ব্যক্তিগত জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্ম পালনের বিষয়টি উল্লেখ করে আহমদ শফী বলেন, ‘তিনি আস্তিক, আমরাও আস্তিক। আমদের ও তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমাদের আন্দোলন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে।’৫ মে সংঘর্ষের ঘটনায় হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো নিয়েও সরকার এখন অনেকটা উদাসীন। মামলার ব্যাপারে কোনো তোড়জোড়ও লক্ষ্য করা যায় না। আসামিদের ব্যাপারেও পুলিশ নির্বিকার। সূত্র জানায়, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় সারা দেশে মোট ৬৮টি মামলা হয়েছিল। থেমে গেছে এসব মামলার তদন্ত। এসব মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশেরও আগ্রহ নেই। কোনো আসামিকেও ধরছে না পুলিশ। রাজধানীর ৫৩টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বাইরের ১৫টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের জড়ানো হয়নি। ওই সময় হেফাজতের মহাসচিবসহ অন্তত ৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে প্রায় সবাই জামিনে ছাড়া পান।বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, হেফাজতে ইসলাম নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।  এএসএস/এমএমজেড/এসএইচএস/এবিএস

Advertisement