শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের একটি কর্তব্য হল তার সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বাবার ওপর সন্তানের অধিকার হচ্ছে, সে তার উত্তম নাম রাখবে, তাকে ভালো স্থানে রাখবে এবং তাকে উত্তম আদব শিক্ষা দেবে। (শুআবুল ঈমান লিল বাইহাকি)
Advertisement
তাই এ বিষয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে আমরা শিশুর নামকরণের ব্যাপারে নবিজির (সা.) কিছু পরামর্শ বা দিক-নির্দেশনা উল্লেখ করছি।
১. সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখানাম হতে হবে সুন্দর ও উত্তম অর্থবোধক। নামের প্রভাব মানুষের ওপর পড়ে। তাই কোনো অনর্থক বা খারাপ অর্থবোধক শব্দ নাম হিসেবে নির্বাচন করা যাবে না। সুন্দর নামকরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আপনাদেরকে আপনাদের নাম এবং বাবার নাম ধরে ডাকা হবে, তাই আপনাদের নাম সুন্দর করুন। (সুনানে আবু দাউদ)
কারো নামের অর্থ অসুন্দর অর্থবোধক হলে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পরিবর্তন করে রাখতেন। বর্ণিত রয়েছে, এক নারী সাহাবির নাম ছিলো আসিয়া বা অবাধ্য, রাসুল (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন জামিলা বা রূপবতী। (সুনানে আবু দাউদ)
Advertisement
আল্লাহর অনেক সুন্দর ও গুণবাচক নাম রয়েছে। ওই নামগুলোর সাথে ‘আবদ’ যুক্ত করে নাম রাখা যায়। হাদিসে নবিজি (সা.) এ রকম নামকে আল্লাহর প্রিয় উল্লেখ করে এ রকম রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম ‘আবদুল্লাহ’ ও ‘আবদুর রহমান’। (সহীহ মুসলিম: ২১৩১)
নবিজির (সা.) নিজের দ্বিতীয় ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘আব্দুল্লাহ’। আল্লাহর রাসুলের (সা.) পরামর্শ অনুসরণ করে অনেক সাহাবিও তাদের সন্তানদের নাম ‘আব্দুল্লাহ’ ও ‘আব্দুর রহমান’ রেখেছিলেন।
৩. নবিদের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখাআল্লাহর নবিদের নামের সাথে মিলিয়ে শিশুর নামকরণ করা যায়। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আপনারা নবিদের নামে নামকরণ করুন। (মুসনাদে আহমাদ: ১৯০৩২)
নবিজি (সা.) তার তৃতীয় ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘ইবরাহিম’। ইবরাহিমের জন্মের পর দিন তিনি সাহাবিদের বলেন, গত রাতে আমার একটি ছেলে হয়েছে, আমি তার নাম আমার বাবা ইবরাহিমের নামে রেখেছি। (সহিহ মুসলিম)
Advertisement
সাহাবি-তাবেঈ বা কোনো নেককার বুযুর্গের নামের সাথে মিলিয়েও নাম রাখা যেতে পারে। এক হাদিসে উত্তম ব্যক্তিদের নামে নাম রাখতে উদ্বুদ্ধ করে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি তাদের (হাসান, হুসাইন ও মুহাসসিনের) নাম রেখেছি হজরত হারুনের (আ.) সন্তানদের নামের সাথে মিলিয়ে। (মুসনাদে আহমদ: ৯৫৩)
শিশুর নাম করণের ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত এই মূলনীতিগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি।
শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা মুস্তাহাব। আমর ইবনে শুয়াইব তার বাবা থেকে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী সা. শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নামকরণ করার, চুল ফেলে দেওয়ার এবং আকিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে তিরমিজি)
তবে সপ্তম দিনের আগে এমন কি জন্মের পরপর যদি শিশুর নাম রাখা হয়, তাতেও কোনো দোষ নেই। ওপরে যেমন আমরা উল্লেখ করেছি, নবিজি (সা.) নিজের ছেলে ইবরাহিমের নাম তার জন্মের প্রথম দিনই রেখেছিলেন।
ওএফএফ/জেআইএম