জাতীয়

সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি

‘আইন সবার জন্য সমান, এটা আমরা সবাই বলি, কিন্তু এটা কতটা মানা হয়? দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছরেও সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি। যে ঘটনা আমাদের পুরো জাতিকে পরিবর্তন করে দেয়, পুরো জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেয়, সেটা যদি সংবিধান ধারণ না করে তাহলে এটা কেমন সংবিধান?’

Advertisement

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘৫৩ বছরে সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি। এই দেশে মানুষ ভোট দিয়েছে, কিন্তু যারা ক্ষমতায় গেছে তারা বিষয়টিকে এমনভাবে কুক্ষিগত করেছে, বাকি যারা সাধারণ মানুষ তারা নিজেদের রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে মনে করতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনে আপনি কী লিখছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবে কী করছেন। আইন সবার জন্য সমান, এটা আমরা সবাই বলি, কিন্তু এটা কতটা মানা হয়? সংবিধান সংশোধন করেন আর নতুন করে লেখেন তাতে কিছুই হবে না যদি না রাজনীতিবিদরা আপ্ত বাক্য হিসেবে মানেন।’

Advertisement

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা যদি নতুন করে সংবিধান লিখতে চাই তাহলে আমাদের সামনে গণপরিষদের প্রশ্ন আসবে। সে গণপরিষদে সদস্য কারা হবেন সে প্রশ্ন আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি কি না সে প্রশ্ন আসবে। এই মুহূর্তে আমরা ঐক্যমতে আসতে পারবো কি না সে প্রশ্নও আসবে। সেখানে আমরা ঐক্যমতে আসতে না পারলে সংকট প্রকট হবে, এমন ভয় আমার মধ্যে আছে।’

আরও পড়ুন

সংবিধান সংস্কার কমিশনের নতুন প্রধান আলী রীয়াজ ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ: অ্যাটর্নি জেনারেল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া বাকি সংশোধনী ছিল রাজনৈতিক

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশে কেউ যদি নতুন সংবিধান করতেও চায় সেটা আকাশ থেকে নতুন করে শুরু করবে তা না। সুতরাং আমাদের যে কনটেক্সট সেটা আমরা বাদ দিতে পারবো না। এটা রেখেই আমাদের শুরু করতে হবে। সেই জায়গা থেকে সংবিধান যদি উইল অফ দ্য পিপল হয় তাহলে সেটা কীভাবে ঠিক করবো। আমার কাছে মনে হয় এটা পলিটিক্যাল উইশডম থেকে ঠিক করা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার, নতুন রিপাবলিক দরকার। এই বিষয়ে সম্ভবত সবাই একমত হবে। কিন্তু এর ক্যারেক্টর কী একটা গণতান্ত্রিক রিপাবলিক, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটার ভিত্তি কী হবে..., সংবিধান নতুন চাই অথবা সংস্কার চাই; একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই সে ব্যাপারে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

Advertisement

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘দেশে যখন কোনো বিপ্লব হয় সেটা কি সংবিধান মেনে হয়? যদি না হয়, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনে বড় এক ঘটনা, তাহলে সংবিধান কি এটা ধারণ করে? কেন করে না? সংবিধান কি বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থানের কোনো অপশন রাখে না? যে ঘটনা আমাদের পুরো জাতিকে পরিবর্তন করে দেয়, পুরো জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেয়, সেটা সংবিধান ধারণ করে না, তাহলে এটা কেমন সংবিধান?’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কি সংবিধানের আলোকে হয়েছিল? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট যে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলো এটা কি সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে? তাহলে আমরা যেটাকে সংবিধান বলছি, যা আমাদের পুরো জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবে, যা যা করতে হবে এই অনুযায়ী আমরা করবো। কিন্তু এটা তো আমরা করলাম না, তাহলে সংবিধান লঙ্ঘন করাই কী সংবিধানের সর্বোচ্চ প্রতিপালন?’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আন্দোলন শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই বিভক্তি শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনে কার কতজন শহীদ হয়েছে, কে আন্দোলনের প্রবক্তা, কোন দলের কতটা অবদান সে নিয়ে কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আন্দোলনের স্পিরিটে তো এটা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পরও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধকে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।’

এসময় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর (অব.) নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন

এনএস/ইএ/এএসএম