যশোরের বাঘারপাড়ায় আলোচিত শিশু তাসনিমা খাতুন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। তারা হলেন, বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে তহিদুর রহমান (৫৫), তহিদুর রহমানের স্ত্রী নিরু বেগম (৪২) ও তাদের মেয়ে ইশিতা আক্তার ঋতু (১৯)।
Advertisement
পিবিআই জানিয়েছে, তরুণী ইশিতা আক্তার ঋতুর বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে শিশু তাসনিমাকে। শিশু তাসনিমা দক্ষিণ শ্রীরামপুর গ্রামের রজিবুল ইসলামের মেয়ে।
পিবিআই ও পুলিশ জানায়, ২০ জুলাই যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দক্ষিণ শ্রীরামপুর গ্রামের বাড়ির পাশে খেলার সময় নিখোঁজ হয় পাঁচ বছর ছয় মাস বয়সী শিশু তাসনিমা খাতুন। পরদিন বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনেরা। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ভেবে স্বজনেরা মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে চাননি। তবে শিশুটির ঠোঁটে ছোট দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ শিশুটির মরদেহ দাফনের অনুমতি না দিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। প্রায় দুই মাস পর ১৫ সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থানায় আসে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ভাসমান মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় শিশুটির পরিবারের লোকজন কাউকে সন্দেহ করেনি। পুলিশের অটল সিদ্ধান্তে ময়নাতদন্ত করা হয়।
যদিও মরদেহ উদ্ধারের পর অপমৃত্যুর মামলার এজাহারে মেয়েটির বাবা রজিবুল ইসলাম উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে তার ছোট মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে পুকুরের এক কোনায় মেয়ের মরদেহ ভাসতে দেখেন।
Advertisement
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, নিহত শিশুটির ঠোঁটে ছোট একটি দাগ ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার সময় দাগটি পুলিশের নজরে আসে। দাগটি দেখে সন্দেহ হয়। এ কারণে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের পর গলা, নাক ও মুখ চেপে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে শিশু তাসনিমা হত্যা মামলার পর পিবিআই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে তারা আসামি চিহ্নিত করে।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা তাসনিমাকে হত্যা ও মৃতদেহ পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, তরুণী ইশিতা আক্তার ঋতু পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। শিশু তাসনিয়া খাতুন ২০ জুলাই সকালে গ্রেফতারকৃত ইশিতা আক্তার ঋতুদের বাড়িতে আসে। ঋতু শিশুটিকে তার রুমের মধ্যে নিয়ে জোরপূর্বক যৌন আসক্তি চরিতার্থ করতে থাকে। যৌনাঙ্গে আঘাতের কারণে শিশু তাসনিয়া চিৎকার করতে থাকলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। মারপিট করার কারণে আহত শিশু তাসনিয়া গোঙ্গাতে থাকে। একপর্যায়ে ইশিতা আক্তার ঋতু তাদের ঘরে থাকা শাবল দিয়ে তাসনিয়ার মাথার পিছনে আঘাত করে। তারপরও গোঙ্গাতে থাকায় তাকে (তাসনিয়া) গলাচেপে হত্যা করে। পরে শিশু তাসনিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ঋতুর বাবা তহিদুর রহমান ও মাতা নিরু বেগম জানার পর মৃতদেহ প্রথমে তাদের ঘরের মধ্যে রক্ষিত প্লেনশিটের বাক্সের মধ্যে লেপ পেঁচিয়ে গোপন করে রাখে। এরপর ২১ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে গোপনে বাড়ির পাশে রাজ্জাক খাঁর পুকুরে ফেলে দেয়। রোববার গ্রেফতারকৃত তিন আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। মিলন রহমান/আরএইচ/জিকেএস
Advertisement