যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, যেকোনো পদমর্যাদার শিক্ষকের বেতন-ভাতা ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আজ যে শিক্ষকরা এখানে আন্দোলন করতে এসেছেন, তাদের বেতন নাকি ৯ হাজার ৩০০ টাকা। এটা কীভাবে হয়? বেসরকারি অফিসের একজন পিয়নও তো এখন ১৫-২০ হাজার টাকা বেতন পান। তাহলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কেন ৯ হাজার টাকা বেতন পাবেন? এ দিয়ে কি একজন মানুষের সংসার চলে? আমরা দাবি জানাচ্ছি, শিক্ষকদের বেতন ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা করতে হবে।’
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শূন্যপদে বদলির দাবিতে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা দেখেছি, একজন শিক্ষক সারাজীবন শিক্ষকতা করেন। অথচ কোনো একটা অনুষ্ঠান করতে; মেয়ের বিয়ে দিতে কিংবা চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হন। এটা পুরো জাতির জন্য অসম্মানের, লজ্জার।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের আমরা সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার কারিগর মনে করি। শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেও একজন শিক্ষক। সেজন্য অবশ্যই তার উচিত শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া। আমরা শিক্ষকসমাজের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। তাদের বেতন কাঠামোতে যে ভয়াবহ বৈষম্য, তা নিরসনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বদলির দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘শিক্ষকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সবার আগের দিতে হবে। তখনই কেবল মেধাবী ও সৎ মানুষগুলো শিক্ষকতায় আসবে। বদলির যে দাবি নিয়ে আপনারা এসেছেন, সেটা তো ছোট দাবি। এটা তো সরকারকে মানতেই হবে। বড় দাবি হলো- বেতন কাঠামো। শিক্ষকদের বেতন হবে সবার ওপরে।’
‘দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের যে সংস্কৃতি, সেটা হলো—দাবি আদায়ে আওয়াজ না তুললে, রাস্তায় না নামলে, তা কখনো পূরণ করা হয় না। সেজন্য আপনারা দাবি তুলবেন এবং দাবি আদায়ে সরব থাকবেন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি।’ যোগ করেন নুরুল হক নুর।
রোববার সকাল ১০টা থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শূন্যপদে বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
Advertisement
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বলেন, ‘এমপিওভুক্ত লাখো শিক্ষক নিজ এলাকা থেকে শত কিলোমিটার দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তারা নামমাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া পান। ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে তাদের মাত্র ১২ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন দেওয়া হয়। এ বেতন-ভাতায় বাড়ি থেকে দূরে থেকে জীবনযাপন করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।’
বদলি চালু করতে সরকারের কোনো বাজেটের প্রয়োজন নেই জানিয়ে তারা বলেন, ‘২০২১ সালের এমপিও নীতিমালার আগে সব নীতিমালায় এমপিওভুক্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি চালুর বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা বহুদিন ধরে বদলি চালুর জন্য সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করে আসছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘বিগত সরকার বদলি চালুর ব্যাপারে কোনো আন্তরিকতা দেখায়নি। বরং এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্তদের পারস্পরিক বদলির প্রজ্ঞাপন দেয়, যা ১ শতাংশ শিক্ষকেরও উপকারে আসবে না। শূন্যপদে বদলি চালুই একমাত্র সমাধান।’
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক হাবিবউল্লাহ রাজু, রবিউল ইসলাম, এ এইচ বাবলু, তোফায়েল সরকার, রফিকুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, মেজবাউল হাসান, রুহুল মামুন, উজ্জল দাস প্রমুখ।
এএএইচ/এনএস/ইএ/জিকেএস