আইন-আদালত

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ : হাইকোর্ট

বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বৃহত্ত্বর ও বিশেষ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। তবে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে একজন বিচারপতি মত দিয়েছেন।অর্থাৎ আজ দুই জন বিচারপতি বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করার ক্ষমতাকে অবৈধ অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পর আদালতে একজন বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করে দ্বিধাবিভক্ত মত দিয়েছেন।এর আগে গত ১০ মার্চ মামলাটির ওপর শুনানি শেষ করেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। ওই দিন শুনানি শেষ করার পরে আজ ০৫ মে রায় ঘোষণার জন্য রাখেন আদালত। তবে জারি করা এ সংক্রান্ত রুলের ওপর দীর্ঘ ৮ মাস সময় ধরে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবীরা। কিন্তু ইতোমধ্যে এই সংশোধনীর আলোকে একটি খসড়া আইন অনুমোদন করেছে মন্ত্রীসভা। প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।সুপ্রিম কোর্টের ৯জন আইনজীবীর করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের  একই বিশেষ বেঞ্চ রায়ের এই দিন ধার্য করেন। রিটে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।অসদাচরণের দায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে এই রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভম্বর রুল জারি করেন। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে দুই সপ্তাহের মধ্যেরুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুলের উপর ২০১৫ সালের ২১ মে শুনানি শুরু হয়ে গত ১০ মার্চ শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।শুনানির প্রথম দিনেই আদালত মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সিনিয়র পাঁচ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি এই শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। পরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়।ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ৯৬ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত ২ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’ ৩ উপ-অনুচ্ছেদ অনুসারে, ‘এই অনুচ্ছেদের ২ দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।’ষোড়শ সংশোধনী বিলটি পাস হওয়ার ঠিক আগে ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এক যৌথ বিবৃতিতে দেশের চারজন বিশিষ্ট আইনজীবী বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।এফএইচ/এএইচ/এআরএস/আরআইপি

Advertisement