পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। একইসঙ্গে এ ঘটনার পুনঃতদন্ত ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন তারা।
Advertisement
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে মানববন্ধনে তারা এই দাবি করেন।
বিডিআর কল্যাণ পরিষদ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্য এবং তাদের পরিবারবর্গ নওগাঁ জেলার ব্যানারে মানববন্ধনে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানো কারও চোখে দেখা যায় বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। আবার কেউ আহাজারি করেন স্বামীকে ফিরে পেতে। বৃদ্ধ বয়সে শেষ সময়ে সন্তানকে এক নজর আগের পোশাকে দেখতে ছুটে আসেন অনেক বিডিআর সদস্যের বাবা-মা।
চাকরিচ্যুত বিডিআর নায়েব সুবেদার আব্দুস সামাদ সাহানার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চাকরিচ্যুত সিপাহী দেলোয়ার হোসেন, সিপাহী সোহরাব হোসেন, সিপাহী জিয়াউল হক, আটক সিপাহী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রেশমী বানু, পিলখানায় নিহত নায়েক সুবেদার মোজাম্মেল হকের ছেলে মোহায়মেনুল হকসহ অন্যরা। উপস্থিত ছিলেন চাকরিচ্যুত ও কারাবন্দি বিডিআর সদস্য এবং তাদের স্বজনরা।
Advertisement
মানববন্ধন শেষে মুক্তির মোড় সড়ক হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রওয়ানা হন তারা। পরে চাকরি পুনর্বহালের দাবি সম্বলিত প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লেখা একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন।
হাবিলদার সুলতান মাহমুদের মেয়ে সানজিদা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা ৪১ ব্যাটালিয়নের অধীনে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২৬ বছর চাকরি করেছেন। কিন্তু পিলখানার ঘটনায় মিথ্যা মামলায় তাকে জেল খাটতে হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীরা অনেক কটূ কথা বলে আমাদের সম্মানহানি করে। তাই আমার নিরপরাধ বাবার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজপথে নেমেছি।’
সিপাহী লুৎফার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিকল্পনা করে পিলখানা থেকে হত্যাকাণ্ড বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েছেন। এরপর অন্যায়ভাবে আমাদের আটক করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। ১৪ মাস কারাভোগ করতে হয়। সাক্ষী-প্রমাণ না থাকায় মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। পরে ওইদিনই আমাদের আবারও আটক করে। এরপর ক্যান্টনমেন্টে নিজস্ব আদালতে ইচ্ছামতো সাজা দেয়। সেখানে আমরা কোনো আইনজীবীর সহযোগিতা নিতে পারিনি। এরপর সাত বছর কারাগারে থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।’
বিডিআরে সিপাহী পদে কর্মরত ছিলেন রাজ্জাক আলী। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় যশোরে একটি ইন্টেলিজেন্স শাখায় কর্মরত ছিলেন। রাজ্জাক আলী বলেন, ‘পিলখানার ঘটনা আমার জানা ছিল না। আমার চাকরির বয়স হয়েছিল ২৪ বছর ৩ মাস। আর ৯ মাস পরই অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।’
Advertisement
তিনি বলেন, আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলাম পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমি জড়িত না। তারপরও ৯ মাস কারাভোগের পর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি এবং নিরপরাধীদের মুক্ত করে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি।
এসআর/জিকেএস