কামরান চৌধুরী
Advertisement
সাইবার অপরাধ, বিশেষত সাইবার বুলিং, আধুনিক যুগে এক নতুন মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচারে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হচ্ছে, এবং এর ফলে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। সাইবার বুলিং হলো অনলাইনে অপমান, হুমকি বা অবমাননাকর আচরণ করা, যার ফলে ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক এবং কখনো কখনো শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
বুলিং কী?বুলিং বলতে এক ধরনের মানসিক বা মৌখিক অত্যাচার বোঝায়, যেখানে একজন মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যকে অপমান করে, হুমকি দেয় বা হেনস্তা করে। সাইবার বুলিংয়ের ক্ষেত্রে, এই অত্যাচার ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম বা অনলাইন ফোরাম ব্যবহার করে। এটি ব্যক্তির মানসিক শান্তি নষ্ট করে এবং অনেক সময় সামাজিকভাবে তাকে একঘরে করে তোলে।
কেইস স্টাডি: সাইবার বুলিং এর ভুক্তভোগী
Advertisement
সম্প্রতি মিসেস জেসমিন আরা নামের একজন ব্যবসায়ী তার বুটিক শপের পণ্য ফেসবুক লাইভে প্রচার করতে গিয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। তার লাইভ সেশনে কিছু বিকৃত মানসিকতার লোক খারাপ এবং অশ্লীল মন্তব্য করে। এতে তিনি প্রায়ই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং হেনস্তার শিকার হন। এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটে চলেছে, যা সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।
সাইবার বুলিংয়ের প্রভাবসাইবার বুলিং শুধু মানসিক চাপ সৃষ্টি করে না, এটি আত্মবিশ্বাসের উপর আঘাত হানে এবং ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী, নারী এবং বিনোদন জগতের তারকারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে তাদের ব্যক্তিগত জীবন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাইবার বুলিং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক আঘাত সৃষ্টি করে, যা আত্মহত্যা পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন গুগল শিটে ছবি বা লোগো যুক্ত করবেন যেভাবে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয়১. প্রমাণ সংরক্ষণবুলিংয়ের শিকার হলে প্রথমেই সেই ঘটনার প্রমাণগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। স্ক্রিনশট, মেসেজ বা যে কোনো ধরনের তথ্য জমা রাখুন, যা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপে সহায়ক হতে পারে।
২. পাল্টা আক্রমণ না করাবুলিংয়ের শিকার হলে কখনোই পাল্টা আক্রমণে যাবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বরং যতটা সম্ভব তা এড়িয়ে চলুন এবং নিজেদের মানসিক শক্তি ধরে রাখুন।
Advertisement
৩. পরিবার বা বন্ধুর সাথে শেয়ার করাঅনেক ভুক্তভোগী নারী বা কিশোর-কিশোরী এই বিষয়টি পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করে। কিন্তু এটি করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আপনাকে মানসিক সহায়তা দিতে পারবে আপনার কাছের মানুষরাই।
4. সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক করাযদি কেউ আপনাকে হেনস্তা করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিন। অযথা তর্কে জড়ানো কোনোভাবেই সমাধান নয়।
৫. আইনি সহায়তা গ্রহণযদি বুলিংয়ের প্রভাব শারীরিক হুমকি বা জীবননাশের পর্যায়ে পৌঁছায়, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাহায্য নিন। বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জরুরি পুলিশ সেবা পাওয়া যায়।
সাইবার বুলিং একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা, যা মোকাবিলা করতে হলে সচেতনতা ও সঠিক আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাই সাইবার বুলিংয়ে ভীত নয়, সাহসী হয়ে মোকাবেলা করা উচিত।
আরও পড়ুন ল্যাপটপ স্লো হলে যা করবেন যে ৪ শব্দ গুগলে সার্চ করলে মজার ব্যাপার ঘটবেলেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক
কেএসকে/এএসএম