কৃষি ও প্রকৃতি

বিরামপুরে কচুর ফলনে খুশি চাষিরা

দিনাজপুরের বিরামপুরে ধানের পর কচু চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন চাষিরা। গত বছর ফলন কম হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ভালো ফলনে খুশির পাশাপাশি ভালো দামের কারণে মন খুলে হাসছেন কৃষকেরা।

Advertisement

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিভন্ন প্রজাতির ১৬০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ হয়েছে। প্রায় ৮৫০ জন কচু চাষ করেছেন। বেশি চাষ হয়েছে বিলাসি জাতের কচু। প্রতি বিঘা জমিতে ৮০-১০০ মণ ফলন হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মণ উৎপাদন হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মুকুন্দপুর, কেশবপুর, ফকিরপাড়া, হরেকৃষ্ণপুর, ভবানিপুর, মাহমুদপুর, প্রস্তমপুর, সারাঙ্গপুর, চকবসন্তপুর, মির্জাপুর ও হাবিবপুর গ্রামের মাঠে সবচেয়ে বেশি কচু চাষ হয়েছে।

কৃষকদের দাবি, প্রতি বিঘা জমিতে শ্রেণিভেদে ৭০-৮৫ মণ ফলন হয়েছে। ১ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার বীজ, পানি ৪ হাজার, নিড়ানি ৬ হাজার, বাঁধানো ৭ হাজার, সার ৬ হাজার, গোবর সার ২ হাজার, চাষ ১ হাজারসহ মোট ৩৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া মাঠ থেকে ফলন তুলতে মণপ্রতি আরও ২০০ এবং পরিষ্কার করতে ১০০ টাকা খরচ হয়।

Advertisement

বিরামপুর কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার চাষিরা ভ্যানে করে জমি থেকে তোলা বিভিন্ন সবজি বাজারে আনছেন। বাজারে প্রতিমণ কচু বিক্রি হচ্ছে শ্রেণিভেদে ১৩৫০-১৪৫০ টাকা পর্যন্ত। এসব কচু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে।

মাধবপাড়া গ্রামের কৃষক ইমরান আলী বলেন, ‘এ বছর ৩ বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে শ্রেণিভেদে ৭৫-৮০ মণ কচু চাষ হয়েছে। গত বছর অনাবৃষ্টির কারণে ফলন কম হলেও এবার ভালো হয়েছে। বর্তমানে ১ মণ কচু ১৪২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেছি। এতে বিঘাপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ হয়েছে।’

আরও পড়ুন পাহাড়ে অ্যাভোকাডো চাষে সফল ওমর শরীফ  জয়পুরহাটে তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে 

ভবানিপুর গ্রামের কচু চাষি আহসান কামাল বলেন, ‘১২ বছর ধরে কচু চাষ করছি। প্রতি বছর বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ফলন কম-বেশি হয়। এবার খুব ভালো ফলন হয়েছে। ২ বিঘা জমিতে ১৮০ মণ কচু হয়েছে। প্রতি মণ কচু ১৪০০ টাকা বিক্রি করেছি। এতে খরচ বাদে ভালোই লাভ হয়েছে।’

আকবর হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিদিন জমি থেকে প্রায় ৫ মণ কচু ওঠানো হয়। এতে ১ হাজার টাকা মজুরি হিসেবে পাই। এলাকায় কচুর আবাদ বেশি হওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’

Advertisement

আরেক শ্রমিক আকলিমা খাতুন বলেন, ‘জমি থেকে ওঠানো কচুর বইগুলো আমরা মাটি পরিষ্কার করে বিক্রির উপযোগী করি। এতে প্রতি মণ কচুতে ৮০ টাকা পাই। এ দিয়েই চলছে সংসার। গতবার চাপ কম থাকলেও এবার অনেক চাপ। ফলন অনেক বেশি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, ‘উপজেলার বেশ কয়েকটি মাঠে কচু চাষ হয়। এলাকার মাটি বেলে-দোআঁশ মাটির মিশ্রণ আছে। এসব জমি কচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।’

তিনি বলেন, ‘বিরামপুর এলাকায় কচু চাষ দিন দিন বাড়ছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ফলন কিছুটা কম-বেশি হয়। এ কচু এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।’

মো. মাহাবুর রহমান/এসইউ/জিকেএস