নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট হওয়া ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পদ্মা। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পদ্মার চরের অন্তত ৩৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। নিম্নাঞ্চলের জমিতে চাষ করা মাষকলাইয়ের ক্ষতি হয়েছে। সঙ্গে মরিচ, কলাসহ অন্যান্য সবজিতেও পড়েছে এর প্রভাব। অন্তত ২৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির শঙ্কা করছেন কৃষকরা।
Advertisement
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মরিচা, ফিলিপনগর, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের এক হাজার ৬২০ হেক্টর জমির মাষকলাই ডুবে গেছে। এতে অন্তত ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া মরিচ ৭০ হেক্টর, কলা ৭৩ হেক্টর ও সবজির ১৩ হেক্টর জমি পানিতে ডুবেছে।
যার ক্ষতির পরিমাণ এখনই করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। এছাড়া এবার চরের ২ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষ করেছিলেন কৃষকরা।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগ জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। যা দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। এতে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
Advertisement
এছাড়া নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় চার ইউনিয়নের পদ্মার চরের অন্তত ৩৬টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন পাউবোর ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবারে পর থেকে আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। দু-এক দিন স্থিতিশীল থেকে পানি কমতে শুরু করবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আর পানি বাড়েনি।
এদিকে সড়ক ডুবে যাওয়ায় চিলমারী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, আমার ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের আশপাশে পানি চলে এসেছে। চলাচলের রাস্তার ওপরে পানি উঠে গেছে। তবে এখনো বসতঘরে পানি প্রবেশ করেনি। চরের আবাদি জমি সব ডুবে গেছে।
Advertisement
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ১৬টি গ্রামের চারপাশে পানি চলে এসেছে। তাদের ইউনিয়নের পদ্মার চরের প্রায় সব আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। এতে মাষকালাই চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চরের পানিবন্দি হয়ে পড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো এখনো স্বাভাবিক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়া এলাকাগুলোর খোঁজ রাখছি।
আল-মামুন সাগর/জেডএইচ/এমএস