দেশজুড়ে

‘আন্দোলনে গেলে শহীদ হবো’ মিছিলে যাওয়ার আগে বলেছিলেন মাসরুর

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান লক্ষ্মীপুরের মাজহারুল ইসলাম মাসরুর ওরফে আলী আজগর (২৯)। তখন তার স্ত্রী বিবি সালমা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ২২ সেপ্টেম্বর ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। এখন নবজাতক সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকার দেখছেন সালমা। তার সাড়ে তিন বছর বয়সী নাফিজা আক্তার নামের আরও এক সন্তান রয়েছে।

Advertisement

গত ৫ আগস্ট গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মাজহারুল ইসলাম মাসরুর।

নিহতের স্ত্রী বিবি সালমা বলেন, ‘মেয়ে প্রতিদিন বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতো। দেড়মাস ধরে তা হচ্ছে না। এজন্য কান্না করে। চারদিকে মেয়ের দুই চোখ শুধু বাবাকে খোঁজে। সামনের দিনগুলোতে আমার সামনে শুধু অন্ধকার। সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’

মাসরুল লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার পাটওয়ারীরহাট ইউনিয়নের চরবড়ালিয়া গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের পাটওয়ারীর হাট ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জীবিকার তাগিদে মাদরাসায় শিক্ষকতা, পোলট্রি খামার ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামের ব্যবসা করেছেন। তবে কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি।

Advertisement

সবশেষ সাতমাস আগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে গাজীপুরে শ্বশুর মো. মোস্তফার কাছে যান। সেখানে ভালোই ছিলেন। ৫ আগস্ট গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার কথা দোকানে থেকেই তিনি স্ত্রীকে জানান। পরে সালমা জানতে পারেন মাসরুর মারা গেছেন।

বিবি সালমা বলেন, “আমি আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছি। তিনি বলেছেন, আমি আন্দোলনে গেলে ‘শহীদ’ হবো। আমাকেও আন্দোলনে যেতে বুঝিয়েছেন। হাজিরহাট মিছিল হবে, আমাকে যেতে বলেছেন। সঙ্গে সন্তানকে নেওয়ার জন্যও বলেছিলেন। মেয়ে মারা গেলে সবাই ‘শহীদের মা’ হিসেবে ডাকবেন।”

মাসরুরের ছোট ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার ভাই অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন। তিনি একটি মাদরাসা করেছেন। পরে ওই মাদরাসার দায়িত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে গাজীপুরে ব্যবসা করতে যান। ৫ আগস্ট তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার পেটে ও পিঠে দুটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।’

মাসরুর আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ছিলেন না জানিয়ে তার চাচা শ্বশুর ওমর ফারুক বলেন, ‘গাজীপুর যাওয়ার আগে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে যায়। এখন তার স্ত্রী-সন্তানের কী হবে? যতই সময় যাচ্ছে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।’

Advertisement

বাবা আবদুল খালেক বলেন, ‘মাসরুর পরিবারের সবার দেখভাল করতো। দ্বীনের কাজে গিয়ে সে মারা গেছে। মৃত্যুতো ঠোকানো যায় না, বাড়িতে থাকলেও মারা যেতো।’

কাজল কায়েস/এসআর/জেআইএম