জাতীয়

সাবেক চবি ভিসি ও বিএফআইইউ প্রধান দুদকের জালে

বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Advertisement

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদক উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানায়।

শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ও প্রথম নারী উপাচার্য। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তিনি দায়িত্ব ছাড়েন। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। শিরিন আখতারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত জুনে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটি।

Advertisement

জানা যায়, অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ ভবন উদ্বোধন, তার শেষ কর্মদিবসে বিনা বিজ্ঞাপনে অর্ধশতাধিক কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

অন্যদিকে, ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদায় দুই বছরের জন্য বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান মাসুদ বিশ্বাস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারে সহায়তা ছাড়াও নানাভাবে ঘুস নেওয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুসের বিনিময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে প্রায় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেন।

২০২৩ সালের ৪ জুন ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। চবির মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও একইদিনে অন্য একটি সভায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

Advertisement

অন্যদিকে, মাসুদ বিশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এছাড়া স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্স লিমিটেডের বিমান ক্রয়ে সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি ঘুসের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে পরিসমাপ্তি করেছেন। এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর আওতায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন না দিয়ে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হিসেবে পাঠিয়েছেন।

অভিযোগ আছে, অনিয়ম ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিমিদ্রী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। ওই স্থগিতাদেশ মাসুদ বিশ্বাস আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। তানাকা গ্রুপ, এস.এ. গ্রুপ এবং আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, অর্থপাচার সংক্রান্ত সুনিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও ওই মামলাগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন।

এছাড়া এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের সঙ্গে যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ উত্তোলণপূর্বক বিদেশে পাচার; আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থপাচারসহ ঘুসের বিনিময়ে জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিদেশে অর্থপাচারের মামলা ধামাচাপা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

এসএম/এসএনআর/জেআইএম