সোশ্যাল মিডিয়া

নির্বাসিত জীবন কেমন বোধ হচ্ছে?

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চিঠি লিখেছিলেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তারপরই এক পোস্টে লিখলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে। গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি অবস্থান করছেন ভারতে।

Advertisement

তসলিমা নাসরিন এবার শেখ হাসিনার ভুলগুলো ধরিয়ে দিলেন। নির্বাসিত জীবনকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। নিজের কষ্টের কথা জানালেন। লেখাটি জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো—

‘‘শুনেছি হাসিনা দিল্লিতে তাঁর মেয়ের বাড়িতে থাকছেন, পার্কেও নাকি ঘুরছেন। আমিও তো মাঝে মাঝে পার্কে যাই। যদি কোনোদিন দেখা হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে? বাংলাদেশে দু’তিন বার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি যে কোনোদিন আমার বিরাট বড় শত্রু হয়ে উঠবেন, আমাকে দেশে ফিরতে দেবেন না, আমার বই ব্যান করবেন, এ তো কল্পনাও করিনি। তাদেরই তো খুশি করতে আমার শত্রুতা করেছিলেন, যারা দলবদ্ধ হয়ে তাঁকে দেশ থেকে বের করলো। মহিলাটা বন্ধু চিনতে বেজায় ভুল করেছেন। ভালো মানুষদের উপেক্ষা করেছেন। বদ লোকদের পুষেছেন।

কী বলবো? ‘কেমন বুঝছেন মাননীয়া? নির্বাসিত জীবন কেমন বোধ হচ্ছে? এই তো শুরু, আমার মতো নিগৃহীত হন আরও ৩০ বছর, তারপর যদি আমার বেদনা বোঝার ক্ষমতা আপনার হয়! আমার আত্মীয় স্বজন এক এক করে মারা গেল, কারো পাশে থাকার জন্য আমাকে দেশে যেতে দেননি। দম্ভ দেখিয়েছেন। যেন আপনার বাবাই বাবা, আপনার স্বজনই স্বজন! আর কারো বাবা, আর কারো স্বজনের কোনো মূল্য নেই!

Advertisement

আরও পড়ুন ফরহাদ মজহারকে নিয়ে যা লিখেছেন গোলাম মাওলা রনি দেশে ফেরা নিয়ে ড. ইউনূসকে যা বললেন তসলিমা

নিজেকে অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলেছিলেন ম্যাডাম। আপনার অনেক কাছের লোক, অনেক স্তাবক, কিন্তু আপনাকে এখন গালি দিচ্ছে। আর আপনি মোল্লাতোষণের রাজনীতি করে যেসব মৌলবাদি পয়দা করেছিলেন, যারা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী হয়ে আপনাকে তাড়ালো, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু, আপনার শত্রু আমি, লড়ছি। তারা আপনাকে ঘৃণা করে বলে নয়, আমি লড়ছি দেশটাকে তারা ঘৃণা করে বলে, দেশটার সর্বনাশ তারা করছে বলে।

আপনি তো দেশকে বা দেশের মানুষকে কখনো ভালোবাসেননি, ভালোবেসেছিলেন শুধু নিজেকে আর নিজের আত্মীয় স্বজনকে, আর আস্কারা দিয়ে স্তাবকদের অমানুষ বানিয়েছিলেন! দেশে ফেলে এসেছেন লক্ষ কোটি রাজাকার, লক্ষ কোটি জিহাদি, লক্ষ কোটি নারীবিদ্বেষী ধর্মান্ধ। ইসলাম ইসলাম জপেই তো দেশের এই হাল করেছেন। মাদ্রাসা, মসজিদ বানিয়েছেন, মানুষকে আল্লাহ রসুল জপতে বলেছেন, আর কোরান হাদিসের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন সবাইকে। এসব থেকে কী জন্ম নেয়, জানতেন তো! জেনেশুনে দেশটাকে বিষ পান করিয়েছেন।

আপনার কর্মফল আপনি পেয়েছেন। কিন্তু আমি? সারাজীবন দেশ দেশ করে, দেশের মানুষের ভালো চেয়ে লেখালেখি করলাম, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করলাম, কী লাভ হলো? কিছুই না, কারণ দেশের মানুষকে আপনি মানুষ বানিয়ে আসেননি, এক একটাকে খুনি, বদমাশ আর অমানুষ বানিয়ে এসেছেন। নির্বাসনে আপনার কষ্ট হবে না। আপনার আত্মীয় স্বজন, আপনার আপন লোক তো দেশের বাইরেই সব, তাদের সাহচর্যে আর ধন দৌলতের মধ্যে চমৎকার কাটবে আপনার জীবন। আমার মতো আপনি তো আর একা নন, আমার মতো তো আর নিঃস্ব নন! বদ লোকেরা, আমি লক্ষ্য করেছি, বেশ সুখে শান্তিতেই জীবন কাটায়। ভালো লোকদেরই শুধু দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’

তিনি কি কিছু বলবেন উত্তরে?’’

Advertisement

এসইউ/এএসএম