অর্থনীতি

খাতুনগঞ্জে তেল-চিনির বাজারে উত্তাপ

• সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ভোজ্যতেলে ৩শ, চিনিতে ২শ টাকা বেড়েছে• বাজারে এস আলমের তেল-চিনি সরবরাহ বন্ধের গুজবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকট হবে না

Advertisement

দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের তেল-চিনির বাজার লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ভোজ্যতেলে প্রায় তিনশ ও চিনিতে দুইশ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে খাতুনগঞ্জের বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলম। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বড় জোগানদাতা ছিল শিল্পগ্রুপটি। তবে এতে বাজারে সংকট হবে না বলে দাবি করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘদিন দেশে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে আমদানি পণ্যের ঋণপত্র খুলতে হিমশিম অবস্থা তৈরি হয় আমদানিকারকদের। এর মধ্যে সাতটি ব্যাংক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকার সুযোগে এস আলম গ্রুপ নিয়মিত ভোগ্যপণ্য আমদানি করে আসছিল। খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেল ও চিনির বড় জোগানদাতা এস আলম গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ও এস আলম এডিবল অয়েল লিমিটেড। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সখ্য ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে আমদানি ব্যবসায় একচ্ছত্র প্রভাব তৈরি করে শিল্পগ্রুপটি।

Advertisement

অন্তর্বর্তী সরকার ডলার সংকট সমাধানে কাজ করছে। এতে আমদানির এলসি খুলতে জটিলতা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। তবে গত ৫ আগস্টের পরেও বাজারে এস আলম গ্রুপের তেল-চিনি সরবরাহ বন্ধ হয়নি।- চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে বেকায়দায় পড়ে এস আলম গ্রুপ। এরপরও দীর্ঘ দেড় মাসের বেশি সময় ধরে খাতুনগঞ্জের বাজারে নিয়মিতভাবে ভোজ্যতেল ও চিনি সরবরাহ করে আসছিল তারা। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এই সময়ে হু হু করে বাড়তে থাকে তেল-চিনির পাইকারি দাম।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সময়ে ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি প্রায় ছয়শ টাকার বেশি। একইভাবে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় চারশ টাকা।

আরও পড়ুন খাতুনগঞ্জে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি, ব্যবসায় মন্দা খাতুনগঞ্জে বেড়েছে ভোজ্যতেল-চিনির দাম খাতুনগঞ্জে চার দেশের পেঁয়াজ, কমতে শুরু করেছে দাম

খাতুনগঞ্জের ইমাম শরীফ ব্রাদার্সের পরিচালক ছৈয়দুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে এস আলম তেল-চিনি সরবরাহ দিচ্ছে না। বাজারে বেচাবিক্রিও তেমন নেই। যে কারণে বাজার আজ বাড়েনি। এখন চিনি মণপ্রতি চলছে ৪৬শ টাকা।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন ট্রেডিং একেবারে কমে গেছে। তাই বিক্রি কম। এই সময়ে এস আলম গ্রুপ তেল-চিনি সরবরাহ না দিলেও বাজারে সংকট হবে না।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী শাহজাহান বাহাদুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের অনেক গুদামে এখনো এস আলমের চিনি রয়েছে। বাজারে ট্রেডিং একেবারে কম। আড়তদাররা গুদাম থেকে বস্তা আকারে চিনি বিক্রি করছেন। চট্টগ্রামে এস আলমের তেল-চিনির দাম কখনো নিজ থেকে বাড়ে না। ঢাকার মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিলে খাতুনগঞ্জে বেড়ে যায়।’

আমাদের পর্যাপ্ত পণ্য ও কাঁচামাল মজুত আছে। শুধু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুগার মিল এক-দুদিন বন্ধ থাকতে পারে। বন্ধ থাকলেও আগের মজুত চিনি বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ভোজ্যতেলের সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। এসব পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।- এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা হোসাইন রানা

জানা যায়, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ টন চিনির প্রয়োজন হয়। যার ৯৮ শতাংশের বেশি চিনি আমদানি করতে হয়। দেশে ব্যক্তিখাতের পাঁচ শিল্পগ্রুপ সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও দেশবন্ধু সুগার মিল অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। পরে নিজেদের মিলে পরিশোধন করে এসব চিনি বাজারজাত করে তারা।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ খাতুনগঞ্জের জন্য বড় শিল্পগ্রুপ। বাজারে তেল-চিনি-গম থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের বেশ কয়েকটি আইটেম এস আলম গ্রুপ আমদানি করে। এসব পণ্য খাতুনগঞ্জে সরবরাহ করে এস আলম।’

তিনি বলেন, ‘এখন দেশে রাজনৈতিক সংকট চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার ডলার সংকট সমাধানে কাজ করছে। এতে আমদানির এলসি খুলতে জটিলতা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। তবে গত ৫ আগস্টের পরেও বাজারে এস আলম গ্রুপের তেল-চিনি সরবরাহ বন্ধ হয়নি।’

কথা হলে এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা হোসাইন রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত পণ্য ও কাঁচামাল মজুত আছে। শুধু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুগার মিল এক-দুদিন বন্ধ থাকতে পারে। বন্ধ থাকলেও আগের মজুত চিনি বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ভোজ্যতেলের সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। এসব পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/এএসএম