প্রখর রোদের পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি মিলেছে না কোথাও। অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে গরমে শিশুরা ডায়রিয়া, হাঁপানি ও জ্বরে ভুগছে। একই সঙ্গে বয়োবৃদ্ধদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে।
Advertisement
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী।
এছাড়া হাসপাতালগুলোর আউটডোরে রোগের ভিড় বাড়ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে রোগীর চাপে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর শয্যা সংখ্যা সংকুলান। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে চলাচলের রাস্তার মেঝেতে থাকছেন।
Advertisement
মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মরিয়ম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শুরুতে মেয়ের ডায়রিয়া দেখা দেয়। সঙ্গে শুরু হয় জ্বর এবং প্রচণ্ড বমি। কয়েক দিন আগে যখন ডায়রিয়া দেখা দেয়, তখন থেকেই তার জ্বর। তবে মাঝখানে জ্বর ছাড়ে, আবার আসে। এরকম কয়েকদিন হয়েছে। দুদিন ধরে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছি।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা মজিবুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরমের কারণে ডায়রিয়া হয়েছে। গতকাল থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি।
পৌর শাহিপাড়া মহল্লার ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু কুতালছুমের মা জাগো নিউজকে বলেন, আমার ১০ মাসের শিশু কুলছুমের হঠাৎ পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তারপর সকালে হাসপাতালে ভর্তি করার পর কিছুটা কমে।
গাছবাড়ী থেকে আসা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, গরমে পেটের সমস্যার কারণে সকালে ছোট বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে চিকিৎসা পেলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছে না তারা। দু'একটা ওষুধ ছাড়া বাকি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
Advertisement
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। অনেক সময় অসচেতনের কারণেও হয়। শীতে যেমন ডায়রিয়া রোগী বাড়ে তেমনি অতিরিক্ত গরমেও বাড়ে। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত রোগী আসছে। বর্তমানে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ পেয়ারী রানী রায় বলেন, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত বেড রয়েছে ১০টি। আমরা সেখানে আরও কিছু যুক্ত করেছি। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। আর এখান থেকে প্রতিদিন ২০ জনের বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। ভাপসা গরমে শিশুদের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারীতে ভাপসা গরমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টসহ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে এই গরমে শিশুদের রোদে বের করা যাবে না। বাইরে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পানি বেশি করে খাওয়াতে হবে। এরপরও অসুস্থতা বোধ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাজ্জাজ জাগো নিউজকে বলেন, মূলত গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। আর এবারও গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে এলাকায় ডায়রিয়া একটু বেড়েছে। ওষুধ সরবরাহ কম থাকায় আমরাও রোগীদের চাহিদা মতো ওষুধ দিতে পারছি না।
ইব্রাহিম সুজন/জেডএইচ/জেআইএম