ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নিযুক্ত হয়েছেন শুভঙ্কর সরকার। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দলটির সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাকে এই পদে নিয়োগ করেন।
Advertisement
সরকার ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত এই শুভঙ্কর। এদিকে, রাজ্য কংগ্রেসের বিদায়ী সভাপতি হিসেবে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর অবদানের প্রশংসা করেও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
মূলত গত লোকসভা নির্বাচনের পরই অধীর চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের অস্থায়ী সভাপতি। মল্লিকার্জুন খাড়গে সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পর কোনো রাজ্যে সভাপতি নিয়োগ করা হয়নি জানিয়ে নিজেকে অস্থায়ী সভাপতি অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি।
অধীর ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরের সাবেক সংসদ সদস্য। সম্প্রতি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি না থাকার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তার জায়গায় নতুন কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এ নিয়ে একাধিক নাম সামনে উঠে আসে।
Advertisement
শেষপর্যন্ত একসময় যুব কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা শুভঙ্কর সরকারকেই বেছে নিলো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বরাবরই রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শুভঙ্কর সরকার। ওড়িশাসহ একাধিক রাজ্যে এআইসিসি-র দায়িত্ব পালন করেছেন।
দীর্ঘদিন দিল্লিতেও সংগঠনের কাজ করেছেন শুভঙ্কর। শনিবার তাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি করার পর এআইসিসি-র সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অধীর চৌধুরী দু’দফায় প্রায় ৮ বছর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। প্রথমে ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর। এরপর সোমেন মিত্রের প্রয়াণের পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ফের প্রদেশ কংগ্রেসের হাল ধরেন তিনি। এবারও চার বছর প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব সামলেছেন।
অধীরের জায়গায় শুভঙ্করকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে কোন যুক্তি কাজ করেছে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অধীর চৌধুরী বরাবরই তৃণমূলের বিরোধী। কেন্দ্রীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই দলই রয়েছে। কিন্তু, লোকসভার প্রচারে তৃণমূলকে লাগাতার সমালোচনা করেছেন তিনি।
Advertisement
লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়ার জন্য অধীরকেই দায়ী করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
এমন অবস্থায় অধীরকে সরিয়ে শুভঙ্করকে প্রদেশ সভাপতি করার নেপথ্যে কি পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে। নতুন নেতৃত্বে কংগ্রেস এবার তীব্র তৃণমূল বিরোধিতার অবস্থান থেকে সরে আসবে কিনা আছে সেই প্রশ্নও।
সংবাদমাধ্যম বলছে, লোকসভা ভোটে চরম তৃণমূল বিরোধিতার কারণে আসন সমঝোতা না হওয়ায় প্রদেশ কংগ্রেসের যে শিবির ক্ষুব্ধ ছিল, তার অন্যতম মুখ ছিলেন শুভঙ্কর সরকার।
এআইসিসি সদর দপ্তরে যে বৈঠকে গোলাম আহমেদ মীর অধীরকে সাবেক প্রদেশ সভাপতি বলেছিলেন, সেই বৈঠকেই শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শোনেন কেসি বেণুগোপাল এবং মীর। ফলে শুভঙ্করকে প্রদেশ সভাপতি করে তৃণমূলকে কোনো বার্তা দেওয়া হল কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
শুভঙ্কর সরকার সেভাবে প্রচারে না থাকলেও, চলতি বছরের ৩০ আগষ্ট রাজ্যের জাতীয় কংগ্রেসের সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়া তিনি মেঘালয় প্রদেশ কংগ্রেস ও মিজোরাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডিডি/এসএএইচ