নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শনিবার এক বিবৃতিতে মার্কিন নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান জানানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সে কারণেই মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক করেছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। খবর এএফপির।
Advertisement
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে এবং বৈরুতসহ লেবাননজুড়ে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের কারণে মার্কিন দূতাবাস নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।
বাণিজ্যিক ফ্লাইট এখনও চলাচল করছে তবে সংখ্যা কিছুটা কম। নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হলে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকতে পারে। সেকারণে যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে জুলাইয়ের শেষের দিকে দক্ষিণ বৈরুতে হামলার ঘটনায় হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের নাগরিকদের লেবাননে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে।
Advertisement
গত শুক্রবার ইসরায়েল আবারও দক্ষিণ বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। এবার তারা হিজবুল্লাহর এলিট রাদওয়ান ফোর্সের প্রধান এবং আরও কয়েকজন কমান্ডারকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ওই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন নিহত হয়েছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শনিবার এক বিবৃতিতে নিজ দেশের নাগরিকদের অবিলম্বে দক্ষিণ লেবানন, সিরিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা এবং শরণার্থী বসতি ত্যাগ করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
চলতি সপ্তাহে পেজার বিস্ফোরণ, ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণ এবং ড্রোন হামলার ঘটনায় লেবাননে ৭০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১৭৭ জন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১৫২ জনই ইন্টেন্সিভ কেয়ারে রয়েছেন।
গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এখনও হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে তিন শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ৬৮ জন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখনও ১৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা বেশ গুরুতর।
Advertisement
শুক্রবারের হামলায় হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লেবানন সীমান্ত নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে।
এর আগে লেবাননে তারবিহীন যোগাযোগ যন্ত্র পেজার ও রেডিও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া এর আগে মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ব্যবহার করা পেজার বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছে ২৩০০ এরও বেশি মানুষ। এদিকে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে।
বুধবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের যন্ত্র ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। দেশজুড়ে পাঁচ হাজারের বেশি ডিভাইসে বিস্ফোরণের এই ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত এবং আরও ৬০৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন নেতানিয়াহু: ম্যাক্রোঁ ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর হামলাইসরায়েলের এসব হামলার পর লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দেশটির অনেক নাগরিক এখন বিস্ফোরণের আশঙ্কায় তাদের মোবাইল ফোন থেকেও দূরে থাকছেন। ফলে লেবাননজুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
টিটিএন