ধর্ম

আল্লাহর প্রিয় জিকির

আল্লাহর স্মরণ সর্বক্ষণ অন্তরে জাগরুক রাখা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজে আল্লাহর বিধান ও সন্তুষ্টির কথা মনে রাখা একজন মুমিনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। জিকির শুধু মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার নাম নয়, আল্লাহর যেকোনো ধরনের আনুগত্য ও ইবাদতও জিকির। দোয়া, ইস্তেগফার, তিলাওয়াত ও দ্বীনি আলোচনাও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। একইসাথে আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করা বা আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা বর্ণনা, মহত্ত্ব ও বড়ত্বের ঘোষণা মুখে উচ্চারণ করাও আল্লাহর জিকির এবং অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।

Advertisement

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরি করো না। (সুরা বাকারা: ১৫২) আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সুরা আ’রাফ: ২০৫)

আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ থাকা ব্যক্তিদের কঠিন পরিণতি উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত। আর তাকে কেয়ামতের দিন ওঠাব অন্ধ করে। (সুরা ত্বহা: ১২৪)

এ আয়াতগুলোতে ‘আল্লাহর স্মরণ’ অর্থ সামগ্রিকভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা, তার বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করা। পাশাপাশি মুখে আল্লাহর জিকির করা; তার প্রশংসা, পবিত্রতা বর্ণনা, বড়ত্ব ঘোষণা এবং শুধু তার ইলাহ হওয়ার স্বীকৃতি উচ্চারণ করাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে।

Advertisement

আল্লাহকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখা ও তার আনুগত্য করার ক্ষেত্রে সহায়ক। শয়তানের প্ররোচনা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখা ও গুনাহমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক।

বিভিন্ন হাদিসে ফজিলতপূর্ণ অনেক জিকিরের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত চারটি জিকিরের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে বেশ কিছু হাদিসে। এগুলোকে আল্লাহর প্রিয় জিকির বলা হয়েছে। জিকিরগুলো হলো, সুবাহানাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আলহামদুলিল্লাহ অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই, আল্লাহু আকবার অর্থাৎ আল্লাহ সবচেয়ে বড়।

সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় জিকির চারটি। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। এগুলোর যে কোনোটি দিয়ে তুমি শুরু করতে পারো। (সহিহ মুসলিম: ৫৪১৬)

জিকিরগুলো একসঙ্গে মিলিয়ে এভাবে পড়া যায়: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’

Advertisement

আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার পাঠ করা আমার কাছে ইহজগতের সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়। (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৫)

একবার কয়েকজন দরিদ্র সাহাবি নবিজিকে গিয়ে বলেন, সম্পদশালী সাহাবিরা দান-সদকার মাধ্যমে নেক কাজে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো দান-সদকা করার মতো সামর্থ্য নেই। তখন নবিজি (সা.) তাদেরকে প্রতি নামাজের পর ‘সুবাহানাল্লাহ’ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করার পরামর্শ দেন।

আবু জর বলেন, নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! বিত্তবান লোকেরা সওয়াবের ক্ষেত্রে আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে। আমরা যা বলি, তারাও তা বলে এবং তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু আমরা তা পারি না। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি আপনাদের এমন আমল বলে দিচ্ছি, যা করলে আপনারা আপনাদের অগ্রবর্তীদের ধরতে পারবেন এবং আপনারা যাদের অগ্রবর্তী তারা আপনাদের অতিক্রম করতে পারবে না। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আলহামদুল্লিাহ, সুবহানাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, ৩৩বার এবং ৩৪ বার পাঠ করুন। (সুনানে ইবনে মাজা: ৯২৭)

ওএফএফ/জেআইএম