ক্যাম্পাস

নিপীড়নকারী শিক্ষককে গ্রেফতারেও ক্ষোভ কমেনি শিক্ষার্থীদের

ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কলাবাগান পুলিশ আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌসকে গ্রেফতার করলেও ক্ষোভ কমেনি শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, ফেরদৌস শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তাকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাতে হবে।মঙ্গলবার রাতে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও কুপ্রস্তাব দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত তড়িৎ কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌসকে আটক করে কলাবাগান থানা পুলিশ।বিশ্ববিদ্যালয়টির এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ছাত্র (সাবেক ছাত্র) আসাদুদ্দৌলা আল সায়েম বাদী হয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওই শিক্ষককে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে ওই শিক্ষককে গ্রেফতারের পরেও ক্ষোভ কমেনি শিক্ষার্থীদের।আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের সহযোগী এ অধ্যাপক ছাত্রদের একাডেমিকভাবে হয়রানি, ছাত্রীদের বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করে রুমে ডাকা, শারীরিক সম্পর্ক করার মাধ্যমে নম্বর বেশি পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা  মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করায় বিষয়টি আলোচনায় আসে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার নিয়ে হলি ফ্যামিল রেড ক্রিসেন্ট এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে রাজধানীর পান্থপথ আবাসিক এলাকায়। প্যারাডাইস সুইটসের পাশে শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া ওই ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করে এনে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করে আসছিলেন বলেই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।অভিযোগ রয়েছে, ব্ল্যাকমেইল করার ক্ষেত্রে তিনি একাডেমিকভাবে ভাল করার কথা বলে প্রলুব্ধ করতেন। রুমে ডেকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেন। ভিন্ন মত প্রকাশ করলে খাতায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকিও দিতেন।শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ কারণে অনেক ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া হয়। ওই ছাত্রীকে সহযোগিতাকারী অন্য শিক্ষার্থীদেরও হয়রানি করা হয়। অনেক সময় অভিভাবকদের সাথে কথা বলেও রুমে ডেকে নিতেন ছাত্রীদের। শেষ পর্যন্ত সহযোগিতামূলক প্রস্তাবে রাজিও হতেন অনেক অভিভাবক।গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা প্রথম বিভাগীয় সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের হুমকি দিতে থাকেন। এরপর ভয়, লজ্জা ভেঙে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে শিক্ষার্থীরা।এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার থেকে ক্লাশ-পরীক্ষাসহ একাডেমিক সব পার্ট বন্ধ করে দিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরেও মিছিল ও বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকককে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানায়। ক্যাম্পাসে সাময়িকভাবে প্রবেশাধিকারও কেড়ে নেয়া হয় মাহফুজের। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু তাতেও আন্দোলন থামায়নি শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার রাতে ওই শিক্ষককে কলাবাগান থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু এরপরেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে আসেনি।শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের এখন এক দফা এক দাবি, ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। বুধবার সকাল থেকেই আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্রতিবাদী স্লোগান আর বিক্ষোভে উত্তাল।শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক পিতৃতুল্য। কিন্তু যে শিক্ষক এমন স্থান পেয়েও অসম্মান করে, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে তার কাছ থেকে শেখার আর কিছু নেই।প্রান্তিক নামে সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা ওমন শিক্ষককে আর এই ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। তিনি কলঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি করেছেন।জাহিদ নামে অপর এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক অনেক পবিত্র। একাডেমিক বিষয়ের বাইরেও তিনি নৈতিকতা শিক্ষা দেবেন। কিন্তু যে শিক্ষক নিজেই অনৈতিক তার সামনে কিভাবে বসবো?তিনি বলেন, তিনি কতোটা কলুষিত মনের তা তার ছাত্রীদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারের চ্যাট বক্স দেখলেই যে কেউ অনুমান করতে পারবেন। অনেক ছাত্রীই মান সম্মানের ভয়ে নিজের সাথে করা হয়রানির কথা এখনো স্বীকার করতে পারেনি।নুসরাত নামে এক ছাত্রী জানান, ওই শিক্ষকের বাসায় যেতে আমার বাসা থেকে খুব পীড়াপীড়ি করতো। বুঝতাম আমার বাসার কল করে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু ততো দিনে আমি ওই শিক্ষকের লাম্পট্য চিনে ফেলেছিলাম।ওই ছাত্রী দাবি করে দেখিয়ে দেন, ‘ছাত্রীদের ইনবক্সে পাঠানো অশ্লীল বার্তা ও ছবি দেখলেই কেবল কেউ বুঝবেন ওই শিক্ষক কতোটা অসভ্য আর কুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তি। শিক্ষার্থীদের মোবাইলে নিজের ন্যুড পিক পাঠাতেন।’এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য (ভিসি) এএমএম সাইফুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ওই শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত তদন্ত কমিটিকে যৌন নিপীড়ন ও শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ দ্রুত তদন্ত শেষ করে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করতে হলেও সিন্ডিকেট এর পারমিশন লাগবে বলেও জানান তিনি।জেইউ/এসকেডি/আরআইপি

Advertisement