দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলারসমূহে বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য ২০ কোটি টাকার অধিক ত্রাণ সামগ্রী-নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছে বিএনপি। এসব অর্থ দুর্গত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বন্যা পরবর্তি পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যয় করবে দলটি।
Advertisement
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে আজ অবধি আমরা বিএনপি এবং বিএনপি পরিবার প্রায় ২০ কোটি টাকারও অধিক নগদ আর্থিক এবং ত্রাণ সহায়তা সংগ্রহ করেছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা উত্তর, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের একটা অংশ। এটা ছিল ওয়াস্ট এ্যাফেক্টেড এরিয়া। পরবর্তি সময়ে চাঁদপুরের কয়েকটা উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছিল।
আমাদের প্রাথমিকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম ছিল বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা। তার পরবর্তী সময়ে মানুষকে খাবার সরবারহ করার কাজ দলের জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার দল ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতারা করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় নেই তারপরও বিএনপি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন এবং থাকবে।
Advertisement
জাহিদ বলেন, ত্রাণ সংগ্রহে বিএনপির পরিবার ছাড়াও সাধারণ মানুষ, গৃহবধূ, রিকশাওয়ালা, সাধারণ শ্রমিকও আমাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আমরা প্রতিটি টাকার হিসাব রেখেছি, যারা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন তাদেরকে রশিদ দিয়েছি।
তিনি বলেন, অনেকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছে, অনেকের টাকা নেই নাই। তিনজনের টাকা ভুলে নিয়েছি, অজানা ছিল আমাদের।আমরা সেই ত্রিশ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। নৈতিকভাবে আমরা মনে করি, উনাদের টাকা নেওয়া সঠিক হবে না, নেওয়া উচিত হবে না। সেজন্য আমরা সেই সব মানুষের টাকা আমরা পে-অর্ডার করে ফেরত দিয়েছি। কাজেই আমরা ত্রাণ সংগ্রহে যেমন ট্রান্সপারেন্ট ছিলাম, ত্রাণ বিতরণেরও আমরা ট্রান্সপারেন্ট আছি।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া এই ত্রাণ পুর্নবাসনের জন্য এখন পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার অধিক আমাদের ত্রাণের একটি সেন্ট্রাল রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যালিটেশন ফান্ড আছে। সেটা এই মুহুর্তে জমা আছে। সেটা দিয়ে আমরা পুর্নবাসন কাজগুলো পরিচালনা করবো। আমরা সে জন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসী এবং যারা ত্রাণ সহায়তা করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
জাহিদ বলেন, এখন পানি নেমে যাচ্ছে, এখন শুরু হয়েছে রোগ-বলাই। কিছু সংক্রামক ব্যাধি দেখা দিয়েছে। উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হযেছে। আমাদের ডাক্তাররা শুধু যাচ্ছেন তা না,পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ বিনামূল্যে সরবারহ করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছেন। কৃষির অবস্থা খুবই খারাপ। ফসল পানিতে সব ভেসে গেছে। বীজ পাবে কোথায়? আমরা ইসলামপুর, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর পরিমাণ ধানের বীজ ট্রাকে করে উপদ্রুত এলাকায় সরবারহ করে ফেলেছি এবং কৃষকরা ধান ক্ষেতে বীজ বপন করছে।
Advertisement
তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যা পরবর্তি পুর্নবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহ নির্মাণের সহযোগিতা করা হবে এবং সেই কাজও শুরু করা হয়েছে।
দেশের পূর্বাঞ্চলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ১৩৭ জন শহীদ হয়েছে তাদেরকেও এই তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।
জাহিদ বলেন, এই প্রাকৃতিক দুযোর্গ প্র্রায়শই হবে। এই যে বন্যা দেখেছেন এটা মানবসৃষ্ট। এর মাধ্যমে আমাদের মানুষগুলোকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এটা মোকাবিলা করে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় বাঙালিরা তা জানে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানে। কাজেই কেউ যদি চেষ্টা করে আমাদেরকে এভাবে দাবিয়ে রাখবে অথবা আমাদের যে সার্বভৌমত্ব, আমাদের যে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা দাবিয়ে রাখবে, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশকে গলাটিপে হত্যা করবে, সেটার সুদূর পরাহত, বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য আবদুস সালাম, মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিনুল হক, হাসান জাফির তুহিন, রেজাউল কবির পল এবং ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসএনআর/এমএস