আইন-আদালত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার এ পর্যন্ত ২৮ অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও চারটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

Advertisement

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চারটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করা হয়।

প্রথম অভিযোগ: মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী লক্ষ্মীপুরের বেলায়েত হোসেনের ছেলে শাকিল হোসেন উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার বাবা একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ করেন গত ৩ আগস্ট উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ভ্যানচালক জসিম উদ্দিনের পক্ষে তার বাবা।

Advertisement

তৃতীয় অভিযোগ: ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার শাহজাহানের বিষয়ে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময়ে কোম্পানির সাপ্লায়ারার কাজে থাকা শাহজাহান গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন। ১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যান। এরপর গত ২৪ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারপর ২৬ জুলাই তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। লাশ নিয়ে গ্রামে গিয়ে বাধার মুখে রাত ৩টার পর ঘরের মধ্যে ১০-১২ জন মিলে জানাজা পড়ে লাশ দাফন করেন।

চতুর্থ অভিযোগটি হলো, গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল করার পর বাড্ডা থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গুলশান কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান। তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

এ নিয়ে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই গণহত্যার মোট ২৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার দল আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সংগঠনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে রয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কয়েকজন ওসি, পরিদর্শক, এসআই, এএসএসআই, কনস্টেবল, র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতার নাম। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন শেখ হাসিনাসহ ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা শহীদ ফাহমিনের মা: শেখ হাসিনা সন্তান হারানোর ব্যথা বোঝেন না চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা: হাসিনাসহ মামলার আসামি সাবেক ৩ সিইসি

এরমধ্যে বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ ১০ জনকে নতুন করে তদন্ত সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো বিচারিক প্যানেল না থাকায় এসব অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়া তথা আসামি গ্রেফতারের কোনো আদেশ নিতে পারছে না প্রসিকিউশন।

বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, আজকের চারটিসহ ট্রাইব্যুনালে (প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায়) এ পর্যন্ত ২৮টি অভিযোগ এসেছে। সবগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম রয়েছে। আইনের বিধান অনুযায়ী তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন পর্যালোচনা করে যাদের মূল আসামি মনে হবে, তাদের নাম ট্রাইব্যুনালে পেশ করা হবে। বাদীপক্ষ যেটা নিয়ে এসেছেন পর্যালোচনা করে তার সঙ্গে সংযোজন বিয়োজন হতেই পারে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর যেটা দাখিল করবো, সেটাই হবে প্রোপার মামলা। কোর্ট বসামাত্র আমরা এ বিষয়ে যথাযথ আবেদন করবো।

প্রথম অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছিল ১৪ আগস্টে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির এ অভিযোগ তদন্ত সংস্থায় দায়ের করেন। আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবেন। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে।

অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশি এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করে।

এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস