বিনোদন

ড. ইউনূসের প্রতি আস্থাশীল সুচন্দা, যা বললেন জন্মদিনে

নন্দিত অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার আজ ৭৮তম জন্মদিন। ঘটা করে দিনটি উদযাপন না করলেও বাড়িতে থাকে ঘরোয়া আয়োজন। দুই বোন ববিতা ও চম্পাকে নিয়ে এবার বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তার। জানালেন, কেন সেই সফর বাতিল করলেন এই অভিনেত্রী। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশ নিয়ে ব্যক্ত করলেন আশাবাদ।

Advertisement

যশোরে জন্মেছেন সুচন্দা। ‘কাগজের নৌকা’, ‘বেহুলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘নয়নতারা’, ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘কাঁচের স্বর্গ’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’সহ অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সেসব আজ সোনালি অতীত। আর তিনি বাঙালির হৃদয়ের রানি হয়ে আছেন আজও। মানুষের ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমনি ভালোও বেসেছেন মানুষকে। যেমন আজ জন্মদিনে জানালেন, বিদেশে বেড়াতে না যাওয়ার কারণ দেশের মানুষ!

আরও পড়ুন: পড়া হয়নি অনুভূতি, কষ্ট পেয়ে কাঁদলেন নায়িকা সুচন্দা তারকারা কে কার আত্মীয়?

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘টিকিট বাতিল করেছি। দেশের বাইরে যেতে ভালো লাগছিল না বন্যার কারণে। দেশের মানুষ ভয়াবহ বন্যাকবলিত। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে তাদের দুর্বিসহ জীবন দেখে খুব কষ্ট লাগছে। এই সময়ে দেশের বাইরে ঘুরতে গেলে মনটা অস্থির হয়ে যাবে। কিছুই ভালো লাগবে না। এ কারণে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করেছি। বেঁচে থাকলে, সবকিছু অনুকূলে এলে পরেও দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া যাবে। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মতো মানসিকতা এখন নেই। সারাক্ষণই দেশের কথা ও দেশের মানুষের কথা ভাবছি।’

তিন বোন- সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা

Advertisement

অভিনয়ের পাশপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন সুচন্দা। জহির রায়হানের জীবদ্দশায় ‘টাকা আনা পাই’ ও ‘প্রতিশোধ’ তার প্রযোজিত সিনেমা। পরে ওই তালিকায় যোগ হয় ‘তিনকন্যা’, ‘বেহুলা লখীন্দর’, ‘বাসনা’ ও ‘প্রেমপ্রীতি’। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সেরা ছবি ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন তিনি। জন্মদিন উদযাপন প্রসঙ্গে এই প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি আসলে আয়োজন করে জন্মদিন পালন করি না। তবে এখন নাতি-নাতনিদের আবদার ফেলতে পারি না। তারা আমার জন্মদিনে আনন্দ করতে চায়। এমন করে বায়না ধরে যে, ওদের সঙ্গ না দিয়ে পারি না। ওরা বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে, সেগুলো ওদের সঙ্গে খেতে হয়। ওদের সঙ্গে একটু গল্প, একটু খেলাধুলা, হাসি-ঠাট্টা, দুষ্টুমি করে জন্মদিনে সময় কাটাই।’

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কী চাওয়া সুচন্দার? এই সরকারকে কী পরামর্শ দেবেন তিনি? জানতে চাইলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি একজন শিল্পী। আমি কখনো কোনো কিছুতে নিরাশ হই না। আমি বিশ্বাস করি, এই ছাত্র-আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ড. ইউনূসের মতো একজন বিজ্ঞ মানুষকে পেয়েছি। ওনার মতো একজন গুণী ব্যক্তিত্ব যেহেতু আমাদের মাঝে আছেন, আমি বিশ্বাস করি সামনের দিনগুলোতে দেশে ভালো কিছু হবে।’

দেশে একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে তিনি কীভাবে ন্যায্যতা দেবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এত দিনের সমস্যা ও জঞ্জাল তো খুব দ্রুত পরিষ্কার করা যাবে না। আমরা যদি ভাবি এত বছরের আবর্জনা রাতারাতি দূর করে ফেলবে, সেটা ঠিক হবে না। এমন চিন্তা করা ভুল হবে।

নির্মাতা জহির রায়হানের সঙ্গে সুচন্দা

Advertisement

দেশের প্রায় সব মানুষ ড. ইউনূসকে মূল্যায়ন করে। ফলে তার প্রতি সবার চাওয়াও অনেক। কিন্তু সেই কারণে আমি মনে করি, আমরা যারা দেশকে ভালোবাসি, তারা সবাই ধৈর্য ধারণ করব। আমরা অপেক্ষা করব। আমরা দেশের মঙ্গল চাই। আশা করি দেশের সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

দেশের কিংবদন্তিতুল্য চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানকে বিয়ে করেছিলেন সুচন্দা। ‘চিত্রালী’ ম্যাগাজিনে ‘কাগজের নৌকা’ ছবির শুটিংয়ের ছবি দেখে তাকে পছন্দ করেন নির্মাতা রায়হান। সেই ছবিতে রাজ্জাকের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন সুচন্দা। এক সাক্ষাৎকারে সুচন্দা বলেছিলেন, ‘শুটিংয়ের সময় জহির রায়হান সাহেবের ক্যামেরায় লুক থ্রু দেখে বুঝতাম, তিনি আমার প্রতি দুর্বল।’ পরে ‘আনোয়ারা’ ছবির শুটিংয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন জহির রায়হান। গোপনে বিয়েও করেন তারা। তাদের দুই সন্তান। বড় ছেলে আরাফাত রায়হান অপু ও ছোট ছেলে তপু রায়হান।

এমএমএফ/আরএমডি/জেআইএম