দেশজুড়ে

মেয়াদপূর্তির পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ৩ হাজার বিমা গ্রাহক

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখায় পলিসি করেছিলেন জালাল উদ্দিন। মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠানটি জালাল উদ্দিনের প্রিমিয়ামের রসিদসহ সব কাগজ ও দলিলপত্র নিয়ে নেয়। বীমার পাওনা টাকা কবে পেতে পারেন, এ বিষয়ে তাকে সঠিক কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। ছয় বছর অফিস ঘুরেও টাকা পাননি।

Advertisement

একই অবস্থা এ শাখার প্রায় তিন হাজার গ্রাহকের প্রায় দুই কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এখান থেকে শাখা অফিসও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সৈয়দপুরে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের তিন হাজার গ্রাহকের বিমা পলিসি রয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার। বেশির ভাগ মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে অন্তত ৫-৬ বছর আগে। কারও কারও মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কেটে গেছে আট বছর। টাকা উদ্ধারে প্রথমে গ্রাহকেরা নীলফামারী জেলা অফিস, এরপর রংপুর বিভাগীয় অফিস এবং সর্বশেষ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ধরনা দেন। কাগজপত্রও জমা দেন। কিন্তু টাকা পাননি। শেষ ভরসা হিসেবে গ্রাহকেরা এখন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দ্বারস্থ হয়েছেন।

বাধ্য হয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নীলফামারী আদালতে মামলা করেছেন বিমা কোম্পানিটির সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম। তিনি বলেন, নীলফামারী আদালতে গত ২০ জুলাই কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও হিসাব কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন, বগুড়া অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ এবং রংপুর অঞ্চলের প্রধান মুকসেদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

Advertisement

সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধবা রতনা বেগম বলেন, একসঙ্গে মুনাফাসহ আসল পাবো, এ আশায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতি মাসে ২০০ টাকার কিস্তিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিমা করি পদ্মা লাইফে। ২০১৭ সালে বিমার মেয়াদ শেষ হয়। টাকার জন্য রংপুর, ঢাকা, নীলফামারী তিন অফিসের স্যারদের পেছনে দৌড়াচ্ছি। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। আশা করেছিলাম, জমানো টাকা দিয়ে বড় ছেলেকে একটা ব্যবসা করে দেব। তাহলে আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হবে না। কিন্তু তারা টাকা দিচ্ছেন না।

ভুক্তভোগী জালাল উদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সে পলিসি করি। মেয়াদপূর্তির ৬ বছর পার হলেও টাকা পাচ্ছি না। ভেবেছিলাম, ওই টাকা পেলে মেয়ের বিয়ে দেব। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, জমানো টাকাটাই পাচ্ছি না।

কোম্পানির সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম বলেন, ২০০৫ সালের শেষের দিকে কোম্পানির একটি সভা হয় সৈয়দপুরে। সভায় বিমা করলে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যাবে বলে লোভ দেখানো হয়। এজেন্ট হিসেবে কাজ করলে অনেক টাকা উপার্জন করা যাবে, অল্প দিনে বাড়ি-গাড়ি করা যাবে বলেও স্বপ্ন দেখানো হয়। তাদের কথায় প্রথমে ১০ বছর মেয়াদি একটি ক্ষুদ্র বিমা করি। এরপর তাদের সঙ্গে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করি। প্রায় তিন হাজার পলিসি করিয়েছি। এখন মেয়াদ শেষ হওয়ায় সবাই আমার কাছে এসে টাকা চান। তাদের কারণে বাড়ি থাকতে পারছি না।

মোমেনুল কোম্পানির বগুড়া এবং রংপুর অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ ও মুকসেদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা অফিস থেকে এরমধ্যে ১২ গ্রাহক বিমা দাবির চেক নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওই দুজনের কারণে আমরা টাকা পাচ্ছি না। তারা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোম্পানিও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, বগুড়া অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ ও রংপুর অঞ্চলের প্রধান মোখছেদ আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিমা আইন অনুসারে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে। পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। হতদরিদ্র মানুষের বিমা দাবি যাতে দ্রুত পরিশোধ হয়, সেই ব্যবস্থা নেব।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেওয়া হয়। কিন্তু কল ও মেসেজের উত্তর না দেওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ইব্রাহিম সুজন/আরএইচ/জিকেএস