নেত্রকোনায় দোকানের জমি দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কেন্দুয়া পৌরশহরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
Advertisement
আহতরা কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে জড়ানো দুটি গ্রুপই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর অনুসারী বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে কেন্দুয়া শহরের সোহেল আমিন নামে এক ব্যক্তির একটি দোকানের জায়গা দখল করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের বড় ভাই আল আমিন খন্দকার ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার। এসময় তারা দোকানটিতে তালা লাগিয়ে দেন। একই সময়ে সোহেল আমিনের পক্ষ নিয়ে ওই দোকান এবং জায়গা উদ্ধারে যান উপজেলা বিএনপি সভাপতি জয়নাল ভুঁইয়া ও বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূইয়াসহ তার গ্রুপের লোকজন।
একপর্যায়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে যুবদল নেতা নাসির খন্দকারের পক্ষে পৌরসভার দিগদাইর গ্রামের লোকজন এবং বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূইয়ার পক্ষে উপজেলার চিরাং ইউনিয়নে চকবাট্টা গ্রামের লোকজন এ সংঘর্ষে জড়িত হয়। এতে অন্তত উভয়পক্ষের অর্ধশত লোকজন আহত হন।
Advertisement
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জানান, কিশোরগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর দোকান ও জায়গা কয়েক বছর আগে ভাড়া নিয়ে জাল দলিল করে দখল করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় আল-আমিন খন্দকার। কিন্তু জাল দলিল হওয়ায় সালিশে ও প্রশাসনে বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। এরপর বুধবার রাতে আল আমিন ও তার ভাই পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকারসহ তাদের লোকজন ওই দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে সালিশ করায় জাল-জালিয়াতির বিষয়টা আমরা জানি। তাই এ অনৈতিক এ কর্মকাণ্ড বাধা দেওয়ায় তারা হামলা চালায়। একপর্যায়ে ছাদের ওপর থেকে গুলি করে। গুলিতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
তবে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার বলেন, নিজেরদের কেনা দোকানের দখল বুঝে নেওয়া হয়েছে। এখানে দখলের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন লোকজন নিয়ে এসে দোকানের তালা ভেঙেছে। তার অনুসারী লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে আমাদের রক্ষা করে।
গুলির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কেউ গুলি করেনি।
এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. অনুপ কুমার সরকার জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, জাল দলিলে দোকান দখলকারী আল আমিন খন্দকার আওয়ামী লীগের লোক। তার চাচাতো ভাই যুবদল নেতা উজ্জ্বল খন্দকারকে ম্যানেজ করে ওই দোকানটি দখলের জন্য তালা দেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য সবাই জানে দীর্ঘদিন ধরে আলামিন জায়গা ও দোকান জাল দলিলে দখল করতে চাইছে।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, কেন্দুয়া পৌর শহরের মধ্যবাজারে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এইচ এম কামাল/জেডএইচ/জেআইএম