জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছেন। কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ হাত। গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তাজা বুলেটের আঘাতের ক্ষত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বয়ে বেড়ানো শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। আবার শারীরিকভাবে আহত না হলেও একমাসের আন্দোলন-সংগ্রামে চোখের সামনে বন্ধু-সহপাঠীদের প্রাণ ঝরে যাওয়া দেখে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ‘ট্রমাটাইজ’ বা মানসিক ক্ষত নিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছেন তারা।
Advertisement
আহত ও ট্রমায় ভোগা এমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যৌথভাবে কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ইউনেস্কো। ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ নামে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি। শিগগির একটি ফেমওয়ার্ক প্রণয়ন এবং চুক্তি সই করা হবে বলেও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত এ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে ১৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি সম্প্রসারণ করা হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের সঙ্গে ইউনেস্কোর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাতে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ইউজিসিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
Advertisement
সভায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সচিব মো. ফখরুল ইসলামসহ ইউজিসি ও ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় চার সদস্যের ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ড. সুজান ভাইজ।
সুজান ভাইজ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাদের এ মুহূর্তে অনেক বেশি সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ইউনেস্কোর এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অংশীজনের সামাজিক ও মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেতুবন্ধন তৈরি করা হবে।
একই সঙ্গে উদ্বেগ নিরসন, সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা, বিশ্লেষণ দক্ষতা ও সফট স্কিলস বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান সুজান ভাইজ।
Advertisement
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি চমৎকার প্রস্তাব। সময়োপযোগী এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউজিসি পূর্ণ সহযোগিতা দেবে। প্রকল্পটি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
ইউজিসি সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে ব্যাপকভাবে প্রশংসা কুড়ানো অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের দমনপীড়নে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ইউনেস্কোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অন্য সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বহু শিক্ষার্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। আবার অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনার জন্য এটি সহায়ক হবে।
এএএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস