ধানক্ষেতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধনিচার ডাল পুঁতে রাখা হয়। পাখিরা এসবের ওপর বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। আর এই পদ্ধতিকেই ‘পার্চিং পদ্ধতি’ বলা হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কম খরচে বাড়ছে ফসল উৎপাদন। এতেই জয়পুরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি।
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জয়পুরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় ৬৯ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। জেলায় গড়ে ৮০ ভাগ জমিতে পার্চিং পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে। শতভাগ পার্চিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। আগে স্থানীয় কৃষকেরা ধান লাগানোর পর জমিতে পার্চিং করতে চাইতেন না। ফলে তাদের জমিতে ফলনও কম হতো। বর্তমানে এ পদ্ধতি কৃষকদের খুবই উপকারে আসছে, আগের তুলনায় ফলনও বাড়ছে।
সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া, বটতলী, ধারকী, ক্ষেতলাল উপজেলার মুনঝার, তালশনসহ কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন ধানের জমিতে স্থানীয় কৃষকেরা বাঁশের আগা ও গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ডাল পুঁতছেন, কেউ আবার খড়ির গাছ লাগিয়েছেন। সেখানে ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা খাচ্ছে।
একটি ফিঙে পাখি সারাদিনে কমপক্ষে ২০-২৫টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম ও পুত্তলি খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে হাজার হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হয়।
Advertisement
সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সবুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। আবাদকৃত জমির মধ্যে তিনি বাঁশ ও গাছের ডাল পুঁতে রেখেছেন। সেখানে পাখি এসে বসে ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করায় তুলনামূলক খরচ কমেছে সেই সঙ্গে ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
আরও পড়ুন
টাঙ্গাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি পাট চাষ নড়াইলে এবারও অসময়ে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলনকড়ই চকপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও আমাদের মাঠের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করতো। পোকা দমনে জমিতে কীটনাশক দিলেও কাজ হয় না। এরপর কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় এখন সুফল পাচ্ছি।’
সদর উপজেলার হিচমী গ্রামের কৃষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধানের চারা রোপণের পর পর বাঁশের আগা, ও গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে রাখলে জমিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা যায়। কীটনাশক কম লাগার ফলে ফলনও ভালো হয়।’
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাধারণত ধান গাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাসফড়িং ও পাতাফড়িং আক্রমণ করে। পোকাখাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর। এ পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। সেইসঙ্গে কৃষকের উৎপাদন খরচও কম হয়। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে পার্চিং পদ্ধতির চাষ। এ বছর এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ জমি পার্চিংয়ের আওতায় এসেছে।’
এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্চিং পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হলো পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এ পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোতা ডালগুলোর ওপর পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলায় কম কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। ফলে বেশি ফলন পাওয়া যায়।’
আল মামুন/এসইউ/এমএস