বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা ও গাজীপুরে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পৃথকভাবে নিহত দুজনের বাবা ও একজন আহত ব্যক্তি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন তিনটি অভিযোগসহ মোট ২২টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে নয়টি চিফ প্রসিকিউটর বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়।
Advertisement
গত ১৯ জুলাই বিকেল ৬টায় সাব্বির ইসলাম সাকিব নামে এক ছাত্রকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে পাঁচটি গুলি করে হত্যা করা হয়।
ওই ছাত্রের মরদেহ তার নিজের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে নেওয়ার সময় যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ পার হয়ে জুড়াইনের কাছাকাছি গেলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর করে। রাস্তায় রাস্তায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের বাঁধা পার হয়ে সাব্বিরের গ্রামের বাড়ি পৌঁছাতে রাত ৩টা বেজে যায়। ওই সময় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে জানায়, ৪০ মিনিটের মধ্যে লাশ দাফন না করলে নিয়ে যাওয়া হবে। লাশ আর দাফন করতে দেওয়া হবে না। এ সময় সাব্বিরের বাবা পুলিশকে কাকুতি-মিনতি করে জানান, পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন আসার পর সকাল ১০টায় তারা লাশ দাফন করতে চান। কিন্তু পুলিশ প্রহরায় খুব দ্রুত (রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে) লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগটি দাখিল করেছেন সাব্বিরের বাবা মো. শহিদুল মল্লিক।
ময়মনসিংহের মারজানের চোখে গুলিগত ১৮ জুলাই দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে উত্তরা পূর্ব থানার বিএনএস সেন্টারের সামনে মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম মারজানকে গুলি করে আহত করা হয়। মারজানের চোখে, মুখে, গলায় ও বুকে পুলিশের গুলি লাগে। প্রথমে তিনি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে তার চোখ থেকে গুলি বের করা হয়। সবশেষে তিনি সিএমএইচে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মারজান।
Advertisement
৫ আগস্ট বিকেল ৪টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌচাক এলাকার সন্নিকটে অবস্থিত শফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে মোহাম্মদ হায়াতুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর হায়াতুল্লাহ তার বড় ভাই সোহাগ মিয়ার সঙ্গে ঘটনাস্থলে আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় পুলিশ এবং আনসার বাহিনী গুলি বর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে হায়াতুল্লাহ ও তার ভাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তখন সোহাগ মিয়া ভাই হায়াতুল্লাহকে আর খুঁজে পান না। পরে ১৬ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সহায়তায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে হায়াতুল্লাহর মরদেহ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে হায়াতুল্লাহর বাবা মোহাম্মদ আয়াতুল্লাহ গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন।
এফএইচ/ইএ/এএসএম