দুর্নীতির অভিযোগ এনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদকে এক অনুষ্ঠানে অবরুদ্ধ করে রাখার পর ক্যাম্পাস ছাড়া করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন। এরপরও মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা আবারো তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়ার জন্য ফেয়ারওয়েল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারিতে। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ।
ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পরও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করার খবর শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ওই শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ড. ইকবালের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক পর্যায়ে তিনি অনুষ্ঠান ছেড়ে নিজ বাসায় (শিক্ষকদের বাসভবন) চলে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগের জন্য ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে প্রক্টরের নিরাপত্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়িতে করে ক্যাম্পাস ছাড়েন ড. ইকবাল।
Advertisement
এ বিষয়ে কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকা শাহানি উর্মি বলেন, আমাদের উপাচার্য যেদিন পদত্যাগ করে তখন ড. ইকবাল কবির জাহিদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তাকে বলা হয় তিনি যেন আর ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করেন। তারপরও তিনি অবাধে চলাফেরা করছিলেন। তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা একটি চিঠিও প্রদান করি। তারপরও আজকে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অনুষ্ঠানে তাকে দেখে শিক্ষার্থীরা আর সহ্য করতে পারেনি। পরবর্তীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রেক্ষিতে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে যবিপ্রবির প্রক্টর আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও নীল দলের সভাপতি ড. ইকবাল কবির জাহিদকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি দিয়ে মেইন গেইট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তিনি চলে যেতে সম্মতি জানান এবং তার সম্মতিতেই তাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
এ বিষয়ে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘আমার এক সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানে ছিলাম। এক পর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী স্লোগান দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি আমার জিনিসপত্র নিয়ে চলে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলেছি সরকারি চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষকদের একটি বিধি রয়েছে। ইচ্ছা করলেইতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করা যায় না। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে এভাবে লাঞ্ছিত অপমান না করতে আমি আমার শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছি।’
Advertisement
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট যবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, জিনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মিলন রহমান/এফএ/এএসএম