জাতীয়

১৫-২০ বছর ধরে আমাদের ‘বনসাই’ করে রাখা হয়েছে

১৫-২০ বছর ধরে আমাদের বনসাই (খর্বাকৃতির গাছ) করে রাখা হয়েছে। ভালো কিছু ভাবতে পারছি না, বড় কল্পনা করতে পারছি না। আমরা যদি বড় কল্পনা করতে না পারি, তবে বড় হবো কীভাবে? জাতিকে বুঝতেই দেওয়া হয়নি যে আমরা সমৃদ্ধ জাতি।

Advertisement

জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

ফারুক ই আজম একজন মুক্তিযোদ্ধা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। দুই মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথম পর্ব। এ পর্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর সংস্কার, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি, ভূমিকম্পের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুদ রানা।

আমরা ত্রাণ কী দিতে পেরেছি না পেরেছি সেটা কথা নয়, আমি দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি, তাকে সান্ত্বনা দিতে পেরেছি, ভরসা দিতে পেরেছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্যার মুখোমুখি হয়েছেন। বন্যা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা বলুন?

ফারুক ই আজম: এটা এক দিক থেকে আমার সৌভাগ্য। আমার জীবনের একটা বড় অভিজ্ঞতা হয়েছে। পীড়িত মানুষকে সামান্যতম সেবা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। যেদিন দায়িত্ব নিয়েছি, সেদিন উপদেষ্টা পরিষদের সভা ছিল। সভা শেষে আমি বন্যাকবলিত এলাকায় চলে গেছি।

আরও পড়ুন সর্বনাশের শুরু যেখান থেকে বন্যায় ৭১ জনের মৃত্যু, ফেনীতেই ২৮ বন্যায় ১২০৬ স্কুল-কলেজের ক্ষতি, ৫৬৫টিতে ক্লাস বন্ধ বন্যার পানি নামায় কেন ধীরগতি? কোটি টাকার সম্পদ মুহূর্তেই হয়ে যায় আবর্জনা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে গেছে। বুড়িগঙ্গা থেকে নৌকা তুলে নিয়ে চলে গেছে। কর্ণফুলী থেকে সাম্পান নিয়ে চলে গেছে। অতিরিক্ত আবেগে তো তরুণরা এসেছে, ত্রাণ যখন দেওয়া শেষ, পানি যখন নেমে গেছে, তখন তো তারা নৌকা নিতে পারছে না। পরে চট্টগ্রাম থেকে ক্রেইন এনে ট্রাকে তুলে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে। যারা বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে এসেছিল, তাদেরই আবার ত্রাণ দিতে হয়েছে। এগুলো আমাদের অভিজ্ঞতা।

তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত সেনাবাহিনীর দুর্যোগ মোকাবিলার বিশেষজ্ঞ এক্সপার্টিস ইন ফিল্ড যদি না থাকতো আমরা এত দ্রুত বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতাম না। আমরা ত্রাণ কী দিতে পেরেছি না পেরেছি সেটা কথা নয়, আমি দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি, তাকে সান্ত্বনা দিতে পেরেছি, ভরসা দিতে পেরেছি।

Advertisement

গভীর রাত, কোনো বিদ্যুৎ নেই, দুর্গম এলাকা, কত দূর থেকে ছাত্ররা এসেছে সেখানে। তারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে। এটা কি ভাবা যায়? আমরা কি এ শক্তি বাংলাদেশে কখনো দেখেছি?

জাগো নিউজ: সারাদেশের মানুষ যেভাবে বন্যার্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, এটা আপনাদের কাজ অনেকটাই সহজ করেছে, দায়িত্ব অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিল?

ফারুক ই আজম: এটা শুধু সরকারের দায়িত্ব কমিয়ে দিয়েছে তা নয়, এটা সরকারকে অনেক শক্তি জুগিয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে অনেক সাহস জুগিয়েছে।

আপনাকে একটা ঘটনা বলি, আমরা রাতের আঁধারে লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী যাচ্ছিলাম। রাস্তায় আমাদের গাড়ি পানিতে অর্ধেক ডুবে গেছে। সেখানে দেখি হলুদ জ্যাকেট পরা তরুণরা। আমার কৌতূহল হলো। জিজ্ঞেস করলাম- তোমরা কোথা থেকে এসেছ? একজন বলল, ‘আমরা কুয়েট (খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এসেছি। এখানে একটা বাড়ির ছাদে আমরা ক্যাম্প করেছি। সেখানে আমরা ১৭-১৮ জন আছি। ত্রাণ যেগুলো আসছে সেগুলো আমরা বিলি-বণ্টন করছি।’

গভীর রাত, কোনো বিদ্যুৎ নেই, দুর্গম এলাকা, কত দূর থেকে ছাত্ররা এসেছে সেখানে। তারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে। এটা কি ভাবা যায়? আমরা কি এ শক্তি বাংলাদেশে কখনো দেখেছি? মানুষকে জাগিয়ে দিলে তাদের অসীম শক্তি দেশ পরিবর্তন করতে পারে। আসলে বাংলাদেশের প্রাণ, মানুষের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় আছে। এটাকে জাগাতে পারলে আমাদের এই দেশ, মানুষ বলে সিঙ্গাপুর, আমরা কেন সিঙ্গাপুর হবো? তার থেকে অনেক অনেক বেশি ভালো দেশ হবো। বাংলাদেশ দেখার জন্য মানুষ আসবে বাইরে থেকে।

১৫-২০ বছর ধরে আমাদের বনসাই (খর্বাকৃতির গাছ) করে রাখা হয়েছে। ভালো কিছু ভাবতে পারছি না, বড় কল্পনা করতে পারছি না। আমরা যদি বড় কল্পনা করতে না পারি, তবে বড় হবো কীভাবে? জাতিকে বুঝতেই দেওয়া হয়নি যে আমরা সমৃদ্ধ জাতি।

মন্ত্রণালয়গুলো অনেকটা রোবটিক স্টাইলে কাজ করে। কোনো কর্মকর্তাকে কোনো কাজ দিলে কাজটা করার আগে পাঁচবার স্যার ডাকবে। সে মনে করে এটাই তার কাজ।

আমাকে একটা বাসা দিয়েছে থাকতে। আমি গতকাল (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সেই বাসায় উঠেছি। ওই বাসায় যে বসবাস করবে সে কখনো দরিদ্র মানুষের কথা ভাবতে পারবে না। ওই বাসায় যে প্রাচুর্য, চার-পাঁচটা বেডরুম, মহারাজের বসবাস। আমার নিজেরই গ্লানি মনে হয়েছে যে, এই বাসায় আমি থাকতে এসেছি? আমার কোনো বিকল্প নেই বলে আমি ওই বাসায় গিয়ে উঠেছি। বাংলোগুলো দেখে আমি পরিহার করেছি, ফ্ল্যাট নিয়েছি। কিন্তু ফ্ল্যাটগুলোও প্রাচুর্যে ভরা। এমনভাবে রাখছে যাতে গরিব মানুষের কথা ভাবা যায় না।

একটি দরিদ্র পরিবার পাহাড়ের নিচে কেন বসবাস করতে গেছে, যার ওপরে পাহাড় ভেঙে পড়েছে। আমরা বলছি পাহাড় ধসে মরেছে। সে কোন দুঃখে পরিবার নিয়ে এরকম অরক্ষিত, অনিরাপদ জায়গায় বসবাস করতে গেছে। একই অধিকার আমাদের দুজনেরই। রাষ্ট্রের সংবিধান দুজনকে সমান অধিকার দিয়েছে বসবাস করার। আমি বসবাস করছি কোথায়, আর সে বসবাস করছে কোথায়? যারা এখানে বসবাস করবে তারা কোনোদিনও ওই মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে না।

আরও পড়ুন মৃতপ্রায় ডাকাতিয়া খাল, নামছে না বন্যার পানি বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকটে গবাদি পশু ১০ টাকার ইটা ১০০ টাকায় কেনা যাবে না একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেন যেন নামাজ পড়তে পারি বন্যায় মিশে গেছে নিলু বালার ঘর, দুশ্চিন্তার অন্ত নেই

জাগো নিউজ: বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ কতদূর?

ফারুক ই আজম: ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। কিছু কিছু জায়গা থেকে এসেছে। সব মন্ত্রণালয়ের তথ্য একত্রিত করে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে।

কোথাও কোনো বিচ্যুতি হলে দ্রুত আমরা হস্তক্ষেপ করব। আগের মতো এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার নেই। এটা আমাদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে।

জাগো নিউজ: অতীতের সরকারগুলোর সময় দুর্যোগ শেষে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। পুনর্বাসন স্বচ্ছতার সঙ্গে করার জন্য আপনাদের পদক্ষেপ কী?

ফারুক ই আজম: পুনর্বাসন কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো ছাড়াও এনজিও, ছাত্র, নারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি রয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা একটি মিটিং করেছি। একইভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও কমিটি হবে, নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। কমিটিগুলো পুনর্বাসন কাজ পর্যবেক্ষণ করবে। উপজেলা জেলাকে এবং জেলা কেন্দ্রীয় কমিটিকে প্রতিবেদন দেবে।

কোথাও কোনো বিচ্যুতি হলে দ্রুত আমরা হস্তক্ষেপ করব। আগের মতো এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার নেই। এটা আমাদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে। এতে ম্যানুপুলেশনের ক্ষেত্রটা সংকুচিত হয়েছে। বন্যার পানি কেন নামতে দেরি হয়েছে, সেটা অনুসন্ধানের জন্য বলা হয়েছে। সেটিও আমরা বিবেচনায় নেব।

এখন প্রকল্পগুলো যথার্থভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারছে কি না, না হলে সেটা কীভাবে মানুষের কল্যাণে আসতে পারে সেটা দেখা হবে।

জাগো নিউজ: বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো ও ত্রাণ প্রশাসনের সংস্কার নিয়ে কী ভাবছেন?

ফারুক ই আজম: প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় সচিবদের ডেকে নিয়ে একটা নির্দেশনা দিয়েছেন, কীভাবে সংস্কারগুলো হবে। এখানে (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়) বহু রকমের প্রকল্প আছে, প্রকল্পগুলো সবই জনবান্ধব, মানুষের কল্যাণের জন্যই নেওয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পগুলো যথার্থভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারছে কি না, না হলে সেটা কীভাবে মানুষের কল্যাণে আসতে পারে সেটা দেখা হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যত প্রকল্প আছে, আমরা প্রত্যেকটি আলাদাভাবে মূল্যায়ন করব। মূল্যায়নের পর এ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠাবো। আমরা আপাতত বন্যা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি নিয়ে অতিরিক্ত এনগেইজড আছি, ব্যস্ত আছি।

আরও পড়ুন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করবে দাতা সংস্থাগুলো বন্যায় চাঁদপুরে দেড়শ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা বন্যায় নোয়াখালীতে প্রাণিসম্পদের ক্ষতি সোয়া ৮ কোটি টাকা বালুতে ঢেকে গেছে কৃষকের স্বপ্ন তিন দফা ফসল হারিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে হাওরের কৃষকরা

সংস্কার বিষয়ে আমাদের নজর আছে। সেটি অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে। সবাইকে সচেতন করা হয়েছে। সবার কাছ থেকে স্ব স্ব প্রকল্পে কী ধরনের বিকল্প সংস্কার হতে পারে, সে বিষয়ে তাদের অভিমত চাওয়া হয়েছে। অভিমতগুলো এলে আমরা প্রত্যেকটি প্রকল্প ধরে মূল্যায়ন করব। সংস্কারের ক্ষেত্রে মানুষই হবে প্রধান। জনপ্রাধান্য রেখেই আমরা কাজ করব।

এ প্রকল্পগুলো তাদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নাকি তাদের দারিদ্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। এটা আমার অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।

জাগো নিউজ: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর কাবিখা প্রকল্পের দুর্নীতির কথা সবসময় শোনা যায়।

ফারুক ই আজম: আমি এসে এখানে জানলাম যে এ ধরনের প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো সরাসরি দরিদ্র মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত। এতদিন রাজনৈতিক সরকার প্রকল্পগুলো যেভাবে করেছে, এর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ উপকার পেয়েছে কি না, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। এগুলোর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে আরও সুবিধা দিতে গভীরভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তালিকায় একজন ১০ বছর ধরেই দরিদ্র, এখান থেকে তার নিষ্কৃতি হচ্ছে না কেন? এসব প্রকল্প তো তাদের জন্য টাকা ব্যয় করছে।

এই প্রকল্পগুলো তাদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নাকি তাদের দারিদ্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। এটা আমার অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।

এখানে অনেক নয়-ছয় হয়েছে। যিনি দরিদ্র না তিনিও তালিকায় এসেছেন। যেটা দরিদ্র মানুষের পাওয়ার কথা, সেটা ক্ষমতাধরদের আত্মীয়স্বজনরা পেয়েছে, এমন কথা আমি শুনতে পেয়েছি।

আরও পড়ুন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে: দুর্যোগ উপদেষ্টা ১৬ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার-ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনী সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানো যেতে পারে যেভাবে বন্যার কারণ নিয়ে যা জানা গেলো তিন ধাপে বন্যার্তদের সহায়তা দেবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বন্যাদুর্গত অঞ্চলে যেখানে বন্যার পানি সরছে না, সেখানে একটা পাইলট প্রকল্প আমরা নিয়েছি। দখল হয়ে যাওয়ার কারণে খালগুলো দিয়ে পানি সরছে না। এ বিষয়ে টিআর, কাবিখার মাধ্যমে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটার যদি সুফল পাওয়া যায়, সারাদেশে যাতে এ কাজগুলো করা যায়।

জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছিল।

ফারুক ই আজম: বজ্রপাত নিয়ে একটা প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেটাতে কারিগরি সহায়তা দিতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসেছিলেন। তারা একটা সফট লোনের আওতায় সহায়তা দিতে চায়। তবে তাদের সহায়তা আমাদের জন্য কতটা উপযোগী হবে সেটা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।

সেই সঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যু রোধে কী করতে হবে সেটা দেখতে হবে। যদি তালগাছ লাগানোর কারণে বজ্রপাতের মৃত্যু কমে তবে আমরা সেটাতেই যাব। তবে সব কিছুই করা হবে জনসম্পৃক্ততার ভিত্তিতে।

এখানে এত ভবন, একটার সঙ্গে একটা লাগানো, যদি ভেঙে পড়ে তবে উদ্ধারের কোনো উপায় থাকবে না, পরিত্যক্ত হয়ে যাবে সব।

জাগো নিউজ: বলা হয় ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি একেবারেই অপর্যাপ্ত। এ বিষয়ে আপনারা উদ্যোগ নেবেন কি না?

ফারুক ই আজম: এটা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ঢাকায় যদি ৬ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়, এখানে যে দুর্যোগ হবে, সেটা মোকাবিলা করার মতো লজিস্টিক সাপোর্ট, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি আমাদের নেই। এখানে এত ভবন, একটার সঙ্গে একটা লাগানো, যদি ভেঙে পড়ে তবে উদ্ধারের কোনো উপায় থাকবে না, পরিত্যক্ত হয়ে যাবে সব।

আরও পড়ুন বাংলাদেশকে বন্যা মোকাবিলায় সহায়তার প্রস্তাব পাকিস্তানের বাঁধ দেওয়া-বন্যা সৃষ্টি ভারতের আন্তর্জাতিক অপরাধ বজ্রপাতে মৃত্যু রোধে ১৩২১ কোটি টাকা চেয়ে মিললো ১০০ কোটি! কাজ শেষ না হতেই যমুনায় ধসে পড়লো মুজিব কিল্লা

সম্প্রতি তুরস্ক ও মরক্কোতে যে ভূমিকম্প হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের সেগুলো আমি দেখতে বলেছি। ডাটা নিতে বলেছি। তারা কীভাবে এগুলো মোকাবিলা করেছে। ভূমিকম্প হলে কোনটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে করতে হবে, আবর্জনা কীভাবে সরাতে হবে, সেই সম্পর্কে একটা ম্যানুয়াল লাগবে আমাদের। এগুলো সম্পর্কে কাজ করার জন্য আমি ইতোমধ্যে বলে দিয়েছি। ভূমিকম্পের বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।

আরএমএম/এমএমএআর/এএসএম