গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা করেন বন্দিরা। বিভিন্ন কারাগারে হামলা-ভাঙচুরের পর পালিয়ে যান মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ও জঙ্গিবাদে অভিযুক্ত আসামিরা। এখন পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত ৭০ জঙ্গি পলাতক রয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বকশিবাজারে অবস্থিত কারা অধিদপ্তরে কারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন এ কথা বলেন।
পলাতক বন্দিদের মধ্যে জঙ্গি কতজন রয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত নয়জন জঙ্গি পালিয়েছে। এছাড়া বিচারাধীন মামলার অনেক জঙ্গি পালিয়েছেন এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন জঙ্গি পলাতক রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক বন্দিদের গ্রেফতারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি পালিয়েছিল মোট ৯৮ জন। তাদের মধ্যে অনেককে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Advertisement
বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণক্ষমতা কত ও বর্তমানে কত বন্দি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজারেরও কিছু বেশি। এই মুহূর্তে আমাদের কারাগারে আছে ৫০ হাজারেরও বেশি বন্দি।
কারাগারে হামলার সময় কত আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন,কারাগার থেকে ৯৪টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এখনো উদ্ধার করা বাকি আছে ২৯টি অস্ত্র। অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মোট সংখ্যা ৬৫টি।
কারাগারে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, যারা নিয়ম-বহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলমান রয়েছে। একটা সাধারণ ধারণা কারাগার এবং কারা কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত। আমি কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে এটা স্বীকার করে নিচ্ছি। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি তার মানে হলো আমি এটা খুঁজে বের করবো। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোটা দাগে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আমি অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিচ্ছি। কিছু ব্যবস্থা শিগগির দেখা যাবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে সৎ অফিসারদের আমরা পদায়ন করছি। লম্বা সময় ধরে কিছু লোক একই জায়গায় কাজ করছিল তাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে সাধারণ মানুষসহ কতজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বের হয়ে এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম আলোচিত মোট ৪৩ জন বন্দি এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শীর্ষ জঙ্গি এসব মামলায় যারা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে ছিলেন।
Advertisement
বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর কিছু কিছু কারাগারে হামলা হয় এসময় সাধারণ মানুষদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়, তারা আসলে কারা ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চিহ্নিত করেছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি। ৫ আগস্টের পর যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেক সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতেও হামলা হয়েছিল। কারাগার যেহেতু একটি ক্ষোভের জায়গা ছিল এরই বহিঃপ্রকাশ এসব হামলা।
কারাগারের হামলার ঘটনায় কতগুলো মামলা করা হয়েছে এবং এসব মামলায় কাদের আসামি করা হয়েছে? জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, যেসব কারাগারে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল আমরা প্রতিটাতেই মামলা করেছি। মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামি করতে পারিনি, কারণ পরিস্থিতি যেহেতু ভিন্ন ছিল। অজ্ঞাতনামা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আটটি কারাগারে বিশৃঙ্খলার দায়ে ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। সব মিলে ১৭টি কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
কারা কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্টের বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর মাদকের বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ পাচ্ছি। আসলে এই বিষয়ে আমরা শঙ্কিত। মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ বন্দিদের বিষয়ে যেমন পাচ্ছি তেমনি কারারক্ষী এবং কারা কর্মকর্তাদের বিষয়েও পাচ্ছি। এ বিষয়ে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারে যেন মাদক না ঢুকতে পারে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। মাদকাসক্ত কেউ কারা বিভাগে চাকরিরত অবস্থায় থাকতে পারবে না।
টিটি/এমআইএইচএস/এমএস