ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ঠিকাদারের গাফিলতিতে তিন বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাস নির্মাণের কাজ। ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে বাধা দিলে কাজ বন্ধ করে দেন ঠিকাদার। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ফলে নির্মাণাধীন বীর নিবাসের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। দেবে গেছে মেঝে। বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে চুয়ে পানি পড়ে। দীর্ঘদিনেও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় গোয়ালঘরে গরু-ছাগলের সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
Advertisement
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৬৮ জন অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দ ‘বীর নিবাসের’ কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। গুনবহা ইউনিয়নের হতদরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেনের নামে বরাদ্দ বীর নিবাস নির্মাণের জন্য একমাত্র থাকার ঘর ভেঙে ফেলা হয়। আর কোনো ঘর না থাকায় ঋণের টাকায় নির্মাণ করা গরু-ছাগলের জন্য তৈরি গোয়ালঘরে থাকছেন। তিন বছর ধরে একপাশে গরু-ছাগল, অন্যপাশে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তিনি। তার নির্মাণাধীন ঘরে ফাটল ধরেছে। দেবে গেছে মেঝে। একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে অনিশ্চিত গৃহনির্মাণ নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন তিনি।
শওকত হোসেনের মতো বিপাকে পড়েছে গুনবহা ইউনিয়নের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েনউদ্দিনের পরিবার। তিন বছর ধরে প্রতিবেশীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মোহাম্মদ খানের নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের কাজ হয়নি। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে বাধা দিলে সে কাজ ফেলে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এরকম ১০টি বীর নিবাসের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মেসার্স নাহার বিল্ডার্স এবং মেসার্স তানিম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে। সবশেষ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হলেও নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
গুনবহা গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মোহাম্মদ খানের ছেলে মোহাম্মদ সজীব খান বলেন, ‘আমাদের বীর নিবাসের কাজ তিন বছর ধরে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানানো হলেও কাজ হয়নি।’
Advertisement
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন বলেন, তিন বছর অপেক্ষার করছি। বার বার বললেও তারা আমার ঘরটি করে দিচ্ছেনা। ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে,নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার থাকার মতো কোন ঘর নেই। গরু-ছাগলের ঘরে কোনমতে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এভাবে থাকা যায়না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদার নাহার বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী সিহাব ও ঠিকাদার প্রান্তকে একাধিকবার ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এইচ এম মাজহানুর রহমান বলেন, নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে সংশ্লিষ্ট দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তারপরও তারা কাজ শেষ করতে পারেননি।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী তানভীর হাসান বলেন, উপজেলায় ৬৮ জন অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের মধ্যে ১০টির কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ শেষ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Advertisement
এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম