নবিজির তিন ছেলেই শৈশবে মৃত্যু বরণ করেন। প্রথম দুই ছেলের জন্ম হয়েছিল মক্কায় হজরত খাদিজার (রা.) গর্ভে। নবিজির (সা.) প্রথম ছেলের নাম ছিল কাসেম। তিনি নবিজির (সা.) প্রথম সন্তান। তার নামেই নবিজির কুনিয়ত হয় ‘আবুল কাসেম।’ কাসেম শিশু অবস্থায় মারা যান। অনেকের মতে মৃত্যুর আগে তিনি বাহনে চড়ার বয়সে পৌঁছেছিলেন।
Advertisement
নবিজির দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহর জন্ম অনেকের মতে রাসুলের (সা.) নবুয়ত লাভের পরে, অনেকের মতে নবুয়ত লাভের আগেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার লকব বা উপাধি/ উপনাম ছিলো তাইয়িব ও তাহির। তিনিও শিশু অবস্থায় মক্কায় মৃত্যুবরণ করেন।
নবিজির তৃতীয় ছেলে ইবরাহিমের জন্ম হয় মদিনায় ৮ম হিজরীতে। নবিজির (সা.) দাসী মারিয়া আল-কিবতিয়ার গর্ভে তার জন্ম হয়েছিল। আল্লাহর সম্মানিত নবি ও খলিল হজরত ইবরাহিমের নামে নবিজি (সা.) তার নাম রাখেন ‘ইবরাহিম’। হাদিসে এসেছে, ছেলে ইবরাহিমের (আ.) জন্মের প্রথম দিনই তিনি তার নাম রেখেছিলেন। ইবরাহিমের জন্মের দিনই রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলেছিলেন, গত রাতে আমার একটি ছেলে হয়েছে, আমি তার নাম আমার বাবা ইবরাহিমের নামে রেখেছি। (সহিহ মুসলিম)
ইবরাহিমও খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইবরাহিমকে উম্মে সাইফ নামের একজন ধাত্রীর কাছে রাখা হয়েছিল, যিনি ছিলেন লৌহকার আবু সাইফের স্ত্রী। নবিজি (সা.) প্রায়ই অনেক পথ হেঁটে মদিনার শহরতলিতে অবস্থিত আবু সাইফের বাড়িতে ইবরাহিমকে দেখতে যেতেন। তাকে কিছুক্ষণ কোলে রেখে আদর করতেন।
Advertisement
ইবরাহিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। নবিজিকে (সা.) খবর দেওয়া হয় ইবরাহিম সম্ভবত আর বেশিক্ষণ বাঁচবেন না। এই সংবাদে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। আবদুর রহমান ইবনে আউফের হাত ধরে তিনি ইবরাহিমকে দেখতে যান।
ইবরাহিমকে যখন তার কোলে দেওয়া হয়, তখন ইবরাহিম শেষ কিছু নিশ্বাস নিচ্ছিলেন। নবিজি (সা.) ইবরাহিমকে নিজের কোলে নিয়ে তার হাত ধরে নাড়তে থাকলেন। তার চেহারা শোকে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কান্নারুদ্ধ গলায় তিনি শুধু বললেন, ইবরাহিম! আল্লাহর ফয়সালার বিরুদ্ধে আমরা কিছুই করতে পারি না।
নবিজির (সা.) চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। তার মা ও খালাও কাঁদতে লাগলেন। নবিজি (সা.) তাদের কান্না থামানোর নির্দেশ দেননি।
ইবরাহিম যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন, আশার যে ক্ষীণ প্রদীপ মিটি মিটি জ্বলছিল, তাও নিভে গেলো, তখন নবিজি (সা.) চোখে অশ্রু নিয়ে মৃত শিশুটিকে বললেন, ইবরাহিম! যদি এটা সত্য না হত যে আমরা সবাই একদিন একে অপরের সাথে মিলিত হবো, তাহলে আমরা তোমার জন্য আরো বেশি শোক করতাম!
Advertisement
এরপর তিনি বললেন, চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় শোকাহত হয়, কিন্তু আমরা শুধু তাই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন। হে ইবরাহিম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত! (হায়াতু মুহাম্মাদ, হুসাইন হাইকাল)
ওএফএফ/এএসএম