প্রবাস

‘হলের সিট প্রয়োজন নেই, মেসেই নিরাপদ’

আরিফুল ইসলাম আরিফ, কুয়েত থেকে

Advertisement

তখন ঢাকা কলেজে ১৪-১৫ সেশনে ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হয়েছি। মেসে থাকতাম পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। যেহেতু ভর্তির আগেই এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সেখানে উঠেছিলাম তাই ঢাকা কলেজ দূরে হলেও মেস আর পরিবর্তন করিনি। মেসের প্রায় সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র ছিলেন।

আমার বয়স তখন ২০ হবে। সত্যিই জানতাম না আমার রক্তের গ্রুপ কি? কখনো জানার দরকার পড়েনি। তাই পরীক্ষা করাও হয়নি। আমার এক রুমমেট বললো তাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বন্ধন’ নামে একটা ব্লাড ডোনেশন সংগঠন আছে, সেখানে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়। আমি ভাবলাম এত বয়স হলো এখনো নিজের রক্তের গ্রুপ জানি না, এটা লজ্জার, যাই সেখানে গিয়ে ব্লাড পরীক্ষা করে আসলাম।

ওখানে যাওয়ার পর বন্ধনের একজন কর্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন। তিনি আমার ব্লাড পরীক্ষা করলেন। ব্লাড পরীক্ষা করার পর তিনি আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন, আমি কোথায় পড়ি, কিসে পড়ি ইত্যাদি। বললাম আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র। তিনি বললেন ঢাকা কলেজেও বন্ধনের শাখা আছে।

Advertisement

আমি যেহেতু জানি না, তাই বললাম আমার জানা নেই। পরক্ষণে তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি হলে থাকি কি না? না থাকলে তিনি একটা সিট ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি না সূচক উত্তর দিয়ে বললাম, হলে উঠা হয়নি। তিনি আমার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম কোনো রাজনীতি করি না।

বললেন তাহলে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। আমি মনে মনে বিরক্ত হয়ে বললাম, আমার সিটের দরকার নেই। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম।

কি এক দুঃশাসন আমরা পার করে এসেছি তা ভাবলেই গা শিউরে উঠে। নিজ প্রতিষ্ঠানের একজন নিয়মিত ছাত্র হয়েও আমাকে ছাত্র রাজনীতির পরিচয় দিয়ে হলে থাকতে হবে! নেতাদের কথা শুনতে হবে। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। মনের বিরুদ্ধে হলেও সেখানে যেতে হবে। না গেলে নামের তালিকা নিয়ে আসবে। শিবির ট্যাগ দিয়ে মারবে। নেতার নামে স্লোগান দিতে হবে। আরও কত কি!

আমরা আর সেই দুঃশাসন চাই না, ক্যাম্পাস হোক ছাত্র রাজনীতিমুক্ত। রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, ছাত্র পরিচয়ে হোক হল বরাদ্দ।

Advertisement

এমআরএম/এএসএম