সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থেকেই অবসরে যাওয়া আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর মিলন। তিনি কিছু পরামর্শও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে। এমনকি বিষয়টি বেশি করে শেয়ার করে এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে আহ্বানও জানিয়েছেন।
Advertisement
মো. মাহবুব কবীর মিলন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অসংখ্য ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে তরুণদের স্বপ্নপূরণে অসংখ্য সংস্কার করলেন, বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন করে সব ময়লা আবর্জনা দূর করে আলোকিত বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করলেন। আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু জগতের এক নম্বর খাদ্য ভেজালের দেশে সেই উন্নয়ন সাস্টেইন করবে তো! ধসে পড়বে না তো!
যে দেশের চাল, ডাল, আলু, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, মুরগি, সবকিছুতেই থাকে মারাত্মক পরিমাণে হেভিমেটাল বা বিষ। হেভিমেটালের সাথে শাক-সবজিতে থাকে কীটনাশক রেসিডিউ। প্রতিদিন প্রতিবেলা প্রতি প্লেটে ভরা থাকে বিষ আর বিষ। যে দেশে আমদানি করা কীটনাশকে থাকে মারাত্মক পরিমাণে হেভিমেটাল। যে দেশের জনগণ বেঁচে থাকে ফার্মেসি আর হাসপাতালের ওপর। যে দেশের ঘরে ঘরে ক্যানসার আর কিডনি বিকলের রোগি। সে দেশকে শান্তি আর কল্যাণের দেশ বানাবেন কিভাবে!
যে দেশে ফুড সেইফটি অথোরিটি (বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) নামে আছে এক ঠুঁটো জগন্নাথ নিধিরাম সর্দার। কর্মকর্তারা আসে আর যায়, টাইম পাস এবং বেতন তোলার জন্য। যে দেশে ফুড সেইফটি অথোরিটি থাকে ধান, চাল, গোডাউন নিয়ে ব্যস্ত থাকা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে, সেখানে এই অথোরিটির ধ্বংস ছাড়া উন্নয়ন কখনো দেখবেন না। সারা জগতের ফুড সেইফটি অথোরিটি থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে। থাকতে পারে সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে। আমাদের এখানে আছে ধান, চাল আর গমের আন্ডারে। কতটা দুর্ভাগা এই জাতি!
Advertisement
আরও পড়ুন
‘দুর্নীতি দূর করতে চেয়ে কেন শাস্তি পেয়েছিলাম’ বর্তমান সরকারের বিরাট কূটনৈতিক অর্জনজগতের সব দেশের ফুড সেইফটি অথোরিটির কর্মকর্তারা হয় মারাত্মক ক্ষমতাবান। তারা প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা, জব্দ, বিপুল পরিমাণ জরিমানা আদায় ও গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু আমাদের এই অথোরিটির কর্মকর্তাদের এক টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা নেই। সবকিছু নির্ভর করতে হয় মোবাইল কোর্টের ওপর। মোবাইল কোর্ট নির্ভর কোনো প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দিয়ে একটি যুগোপযোগী আইন সংশোধনের খসড়া ২-৩ বছর ধরে পড়ে আছে খাদ্য সচিবের টেবিলে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট সব আইনের সংস্কার প্রস্তাব সব ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠানো হলেও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কোনো সংস্কার প্রস্তাব পাঠায়নি আজ পর্যন্ত।
যে দেশে সিন্ডিকেট মাফিয়া দেশ চালায়। যে দেশে খাদ্য ভেজালের ল্যাব রিপোর্ট সরকারিভাবে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়, গায়েব করে ফেলা হয়। তা প্রকাশে সাহস পায় না কেউ, সেখানে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় নিরাপদ খাদ্য কমিশন গঠন করা না হলে, রাজনৈতিক সরকারের সময় বাংলাদেশে কখনোই খাদ্য নিরাপদ করা সম্ভব হবে না। আমরা পাবো বিকলাঙ্গ, অসুস্থ এবং পঙ্গু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নির্ভর এক জাতি।
Advertisement
এসইউ/এমএস