নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে হত্যার অভিযোগে ১০ বছর পর সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ আওয়ামী লীগের ৪১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
Advertisement
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) নীলফামারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এ মামলাটি করেন নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর স্ত্রী শাহানাজ বেগম।
আদালত মামলা গ্রহণ করে নীলফামারী সদর থানা পুলিশকে এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় আরও এক হাজার জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌরমেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হাসান শাহ আপেল, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার প্রমুখ।
Advertisement
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার ঘটে। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর বাড়িতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্য খুঁজতে যান। সেখানে তাকে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজনকে মারধর করে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পরে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি কয়েকজন যুবক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় থানা ও ডিবি অফিসে খোঁজাখুঁজি করেও রব্বানীর সন্ধান পাননি।
গত ১৮ জানুয়ারি সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের আরাজী ইটাখোলা এলাকায় নীলফামারী-ডোমার সড়কের পাশে বাঁশঝাড়ে রব্বানীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পরিবারের লোকজন মরদেহ নিয়ে এসে দাফনের প্রস্তুতি নেন। এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসাদুজ্জামান নূরের নির্দেশে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।
মামলার বাদী শাহানাজ বেগম জাগো নিউজকে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। এ অবস্থায় ৬-৭ মাস আত্মগোপনে থেকেছি। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এম আর সাঈদ জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে আদালত থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। আদালতের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
Advertisement
এরআগে গত ৪ আগস্ট নীলফামারী জেলা বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মামলায় আসাদুজ্জামান নূরকে আসামি করে মামলা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী সৌমিক হাসান সোহান মামলায় আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্য গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় আসাদুজ্জামান নূরকে রাজধানীর বেইলি রোডের নওরতন কলোনি থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিরপুর মডেল থানায় করা সিয়াম হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এসময় তাদের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন দুজনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ইব্রাহিম সুজন/এসআর/এএসএম