বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্ম ও নবুয়তলাভ ছিল মানবজাতির প্রতি, বিশ্বজগতের প্রতি আল্লাহর বড় নেয়ামত ও করুণা। শুধু তার নবুয়্যতের ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারী মুমিনদের জন্য নয়, বরং সব মানুষের জন্যই তিনি রহমত ছিলেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি বিশ্বজগতের প্রতি করুণা হিসেবে। (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে শুধু মুমিন বা মুসলমানদের কথা বলেননি, পুরো মানবজাতি এবং পুরো বিশ্বজগতের সবার কথা বলেছেন। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কোরআনের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনে কাসির বলেছেন, আল্লাহ তাকে পুরো বিশ্বজগতের জন্যই রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। মানুষের মধ্যে যারা এই রহমত গ্রহণ করবে এবং শোকর আদায় করবে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্য লাভ করবে। যারা এই রহমত প্রত্যাখ্যান করবে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবিদের প্রতি অত্যন্ত রহমদিল ও দয়ার্দ্র ছিলেন। একইভাবে তিনি তার শত্রুদের প্রতিও দয়ার্দ্র ছিলেন। তার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ ছিল না। তিনি আল্লাহর নবি হিসেবে চাইতেন সবাই হেদায়াতের পথে আসুক, ইসলাম গ্রহণ করে দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি লাভ করুক।
তার শত্রুরা তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু তিনি তাদের অমঙ্গল চাননি, তাদেরকে অভিশাপ দেননি, তাদের জন্য বদদোয়া করেননি। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, একবার নবিজিকে (সা.) তার কোনো সাহাবি বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করুন! তিনি বললেন, আমাকে অভিশাপদাতা হিসেবে পাঠানো হয়নি, রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে। (সহিহ মুসলিম)
Advertisement
দ্বীনের দাওয়াত ও আত্মরক্ষার প্রয়োজনে নবিজি (সা.) শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি সব সময় ন্যায়পরায়ণ থেকেছেন, অপ্রয়োজনীয় নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেননি। নিকৃষ্ট শত্রুর বিরুদ্ধেও প্রতিশোধপরায়ণ হননি, বাড়াবাড়ি করেননি। কোথাও কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার সময় তিনি বলতেন, আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধযাত্রা করো। যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তবে বাড়াবাড়ি করবে না, গাদ্দারি করবে না, কারো লাশ বিকৃত করবে না এবং কোনো শিশুকে হত্যা করবে না। (সহিহ মুসলিম)
তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে যারা বন্দী হয়েছে, তাদের সাথেও তিনি উত্তম আচরণ করেছেন এবং তার সাহাবিদেরও নির্দেশ দিয়েছেন উত্তম আচরণ করতে। বদরের যুদ্ধে বন্দী মুশরিকদের সাহাবিরা খাবার খাইয়েছেন নিজেরা অভুক্ত থেকে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা সাহাবিদের এই আচরণের প্রশংসা করে বলেছেন, তারা নিজেদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। (সুরা দাহর: ৮)
ব্যক্তিগত পর্যায়েও চরম দুরাচার কাফের ও দুষ্টলোকদের সাথে তিনি উত্তম, নম্র ও বিনয়ী আচরণ করতেন। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শাস্তি না দিয়ে তাদের খারাপ আচরণ ও বেয়াদবি ক্ষমা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.) সাথে দেখা করার অনুমতি চাইল। আমি সে সময় তার কাছে বসে ছিলাম। তিনি বললেন, এ অত্যন্ত নিকৃষ্ট প্রকৃতির লোক! তারপর তাকে যখন আসার অনুমতি দেয়া হলো, তিনি তার সাথে খুব নম্রভাবে কথা বললেন। লোকটি বের হয়ে গেলে আমি বললাম, লোকটি সম্পর্কে এরকম বললেন, আবার তার সাথে নম্র ব্যবহার করলেন। রাসুল (সা.) বললেন, আয়েশা! যে লোকের খারাপ ব্যবহারের জন্য লোকজন তাকে পরিহার করে এবং তার থেকে দূরে থাকে, সে সবচেয়ে খারাপ লোক। (শামায়েলে তিরমিজি)
ওএফএফ/এএসএম
Advertisement