বরিশালে গত ১৬ বছরে পরিবহন খাতে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছেন বাস মালিক সমিতির দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতন ও নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের লুটপাটের ফিরিস্তি তুলে ধরতে শুরু করেছেন চালক, সুপারভাইজারসহ বাস মালিকরা। সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ থেকে শুরু করে সাবেক দুই সভাপতি এই লুটপাটে অভিযুক্ত।
Advertisement
বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, এই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০০ বাস চলাচল করে। এসব বাস থেকে (দূরপাল্লার) ৩৫০ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ বাস থেকে ১২০ টাকা করে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হতো। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নেওয়া এসব চাঁদার টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা জানেন না চালক, সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্টরা।
বাসচালক শামীম রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ছাড়ার সময় শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক সমিতির নামে ৫০-১২০ টাকা দিতে হয়। তবে এসব টাকা কোন খাতে কীভাবে ব্যয় হয় তা জানি না।’
ঢাকা-বরিশাল রুটের লাবিবা পরিবহনের সুপারভাইজার মিজান উদ্দিন বলেন, ‘স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি নিয়ে বের হলে প্রথমেই ৫০ টাকা লাঠিয়ালকে দিতে হয়। মালিক সমিতি ও টার্মিনাল চার্জ দিতে হয় ৩০০ টাকা। এসব টাকার ব্যয় কীভাবে হয় জানি না।’
Advertisement
বিএম পরিবহনের সুপারভাইজার মো. শহীদ। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে বরিশালে ঢুকলেই পার্কিং চার্জ ১২০ টাকা করে দিতে হয়। এভাবে শত শত গাড়ি একই নিয়মে টাকা দিয়ে এ রুটে গাড়ি চালাচ্ছে। এসব টাকা আদায়কারীরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করার কথা বললেও আদতে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। সব টাকাই মালিক সমিতি ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বদৌলতে ২০১২ থেকে ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাস মালিক সমিতির সভাপতি পদের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি অনিয়ম ও জবর-দখল করেছেন। দায়িত্বে থাকাকালীন নিজের ইচ্ছেমতো কোটায় বাসসহ লাইন নিয়েছেন। যার বাজারমূল্য কোটি টাকার ওপরে।
এরপর গোলাম মাশরেক ২০২২ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে একটি বাস এবং কোটায় একটি লাইন (বাস চলাচলের রুট নির্ধারণ) দিতে বাধ্য করা হয়। যার বাজারমূল্য কোটি টাকার ওপরে।
এ বিষয়ে জানতে বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Advertisement
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সদস্য (বর্তমান পরিষদ) মোশাররফ হোসেন বলেন, সবশেষ গতবছরের নভেম্বরে সাবেক মেয়র খোকন আব্দুল্লাহর বদৌলতে দায়িত্ব নেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য অসীম দেওয়ান। তিনি দায়িত্ব নিয়ে কোটায় একটি বাস কিনলেও সমিতি থেকে ধার নেন ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন সমিতির আওতায় কোনো টাকা নেই, সব টাকা তারা তুলে নিয়েছেন। এখন থেকে আর এমন চাঁদাবাজি হবে না।
নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক সমিতির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউনুস আলী বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহর গাড়ি বিক্রি করে টাকা মালিক সমিতিতে জমা করা হবে। একইভাবে যাদের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না তাদের লাইন বিক্রি করে সমিতির টাকা ওঠানো হবে। বিগত দিনের মতো আর চাঁদাবাজি হতে দেবো না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিএম কলেজের সমন্বয়ক সাব্বির হোসেন বলেন, আমরা নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের মালিকদের বলে দিয়েছি, আগের মতো ছাত্রলীগ, যুবলীগ যেভাবে চাঁদাবাজি করেছে তা আর কেউ করতে পারবেন না। যদি নতুন করে কেউ চাঁদাবাজির চেষ্টা করেন, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা প্রতিহত করবে।
এসআর/এএসএম