জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৫টি দাবি জানিয়েছে লড়াকু ২৪ নামের একটি সংগঠন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।
Advertisement
লড়াকু ২৪-এর সহযোদ্ধা কানিজ ফাতেমা মিথিলা লিখিত মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত অনেকে এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন আবার কেউ হাত-পা হারিয়ে চিরস্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আবার অনেকের মাথায় বা মেরুদণ্ডে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে চিরস্থায়ীভাবে প্যারালাইজড হয়েছেন। আন্দোলনে আহত-নিহতদের একটা অন্যতম অংশ শ্রমজীবী। তাদের অনেকেই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৭ আগস্ট থেকে এ দলটি কাজ শুরু করে। ৪টি হাসপাতাল স্বশরীরে পরিদর্শন করে ৯৭ জন আহতের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যেখানে এ পর্যন্ত ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ৬৪ জন শ্রমজীবী রয়েছেন। তালিকায় রোগীর নাম, বয়স, পেশা, আহতের বিবরণ, তারিখ, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, মাসিক উপার্জন, পরিবারে উপার্জনকারীর সংখ্যা ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এখনো তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তাদের উল্লেখযোগ্য দাবি সমূহ১. আহত-নিহতদের পরিবারের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন দরকার তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন কিংবা চিরস্থায়ীভাবে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
Advertisement
২. গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের মধ্যে যাদের জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া জরুরি আর কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে সরকারের উদ্যোগে বিদেশে নেওয়া ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন না এটি তাদের জীবন-মরনের প্রশ্ন।
৩. আহতদের তথ্য সংগ্রহে প্রতিটি জেলাকেন্দ্রিক জরুরি তথ্যসংগ্রহ কমিটি গঠন করতে হবে। যারা সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই কমিটির সদস্য তালিকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থী ও সচেতন জনতার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কমিটির সদস্যদের তথ্যসংগ্রহের বিষয়ে সরকারি তহবিলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
৪. প্রত্যেক আহত রোগীর পরিবারের সঙ্গে এক থেকে দুইজন শিক্ষার্থী বা নাগরিক স্বেচ্ছাসেবীদের যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যারা একজন আহত ব্যক্তির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা ও বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় পাশে থাকবেন।
৫. করোনাকালীন সময়ের মতো আহতদের সার্বিক চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য ব্রিফ করতে হবে।
Advertisement
৬. আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
৭. জরুরিভিত্তিতে প্রত্যেক জেলায় সরকারি হাসপাতালে আহতদের জন্য জরুরি তথ্য ও চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র খুলতে হবে।
৮. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে আহতদের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত জীবন-মরণের সমান। তাই সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে রোগীদের দেখতে যাওয়া এবং দেখে বেরিয়ে এসে গণমাধ্যমের সামনে আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় শেষ। আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণের নীতি এই মুহূর্তে বর্জন করতে হবে। আহত শিক্ষার্থী-জনতার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটিয়ে তৎপরতা দৃশ্যমান করতে হবে।
৯. জাতীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। যারা কেবলমাত্র আহতদের চিকিৎসায় পরামর্শ দেবেন ও নজরদারি রাখবেন। প্রয়োজনে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন বিদেশি বা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের এই টাস্কফোর্স-এ নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সমন্বয়ক রেহনুমা আহমেদ, সুমিতা রানী, মিরপুর ২ এর আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
আরএএস/এমআইএইচএস/এমএস