অর্থনীতি

বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ডিম-ব্রয়লার মুরগি

উৎপাদক, পাইকারি ও ভোক্তা তথা খুচরা পর্যায়ে ডিম, সোনালী মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে রাজধানীর বাজারগুলোতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। সোনালী মুরগি বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের জন্য আগের মতোই বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এমনকি সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পর ডিমের দাম আরও বেড়েছে। ফলে বেঁধে দেওয়া দামের তুলনায় প্রতি পিস ডিমের জন্য ক্রেতাদের প্রায় আড়াই টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

গতকাল রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয় সরকার। খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

তবে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে এক পিস ডিম ১৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক হালি (৪টি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। আর এক ডজন (১২টি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা।

Advertisement

অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-১৯৫ টাকা। অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির জন্য ক্রেতাদের কেজি প্রতি ১০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। তবে সোনালী মুরগি সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সোনালী মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন:ডিম-মুরগির দাম বেঁধে দিলো সরকারডিমের দাম আরও বেড়েছে, আগের মতোই মাছ-মাংস-সবজিবেড়েছে ডিমের দাম, কমেছে সবজির

ডিমের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ পাইকারিতে ডিমের দাম আরও বেড়েছে। বাড়তি দামে কিনে আনার কারণে আজ ডিমের ডজন ১৬৫ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই।

সরকার তো খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসেবে এক ডজন ডিমের দাম ১৪৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। এমন কথা বললে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমরা কম টাকায় কিনতে না পারলে কমে বিক্রি করবো কীভাবে? ডিম বিক্রি করে আমাদের খুব একটা লাভ হয় না। আমরাই ১৩ টাকার ওপরে ডিম কিনে এনেছি।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না। নিয়মিত বাজারে তদারকি করতে হবে। ডিমের দাম খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করে না। দাম কমাতে হলে পাইকারি পর্যায়ে দাম কমাতে হবে। আমরা কম দামে কিনতে পারলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করবো।

Advertisement

রামপুরা বাজারে ডিম কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকার ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমাদের কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৪ টাকা করে। তাই শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না, নিয়মিত বাজারে মনিটরিং করতে হবে। না হলে দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এর আগের সরকারও জিনিসপত্রের দাম নিয়ে নানা কথা বলেছে। কিন্তু বাজারে তার কার্যকর প্রতিফলন দেখা যায়নি শুধু মনিটরিংয়ের অভাবে। এই সরকারের কাছে তেমনটা আশা করি না। আমরা চাই এ সরকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবে।

ডিমের দাম নিয়ে হতাশ প্রকাশ করেন মালিবাগের বাসিন্দা জুয়েল হোসেনও। তিনি বলেন, এক পিস ডিমের দাম ১৪ টাকা। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। সরকারের উচিত জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া।

এদিকে ব্রয়লার মুরগির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, মুরগির দাম বাড়েনি, কমেনি, আগে যা ছিল তাই আছে। ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আর সোনালী মুরগি বিক্রি করছি ২৭০ টাকা কেজি।

সরকারের দাম বেঁধে দেওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে সোনালী মুরগি আগে থেকেই তার তুলনায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তুলনায় বেশি আছে। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমতে পারে।

রামপুরার ব্যবসায়ী মো. কামরুল বলেন, খুচরা বাজারে মুরগির দাম নির্ভর করে পাইকারি বাজারের ওপর। আজ পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেনি। তাই আমরাও আগের দামেই বিক্রি করছি। দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি সরকার পাইকারি বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করলে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে আসবে।

তিনি বলেন, আগে সোনালী মুরগি যখন ৩০০ টাকার (কেজি) ওপরে বিক্রি হয়েছে, সে সময় ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সোনালী মুরগির কেজি ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, অথচ ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ টাকা। এর কারণ ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি এবং সরবরাহ তুলনামূলক কম। অন্যদিকে সোনালী মুরগির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি।

এমএএস/জেএইচ/জেআইএম