বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে যশোরের নিম্নাঞ্চল। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা এই বর্ষণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন জেলাবাসী। টানা ভারী বর্ষণ এবং শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ড্রেন উপচে রাস্তাঘাট তলিয়ে নোংরা পানি প্রবেশ করেছে অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
Advertisement
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট, কালভার্ট বেদখল, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পৌরসভার গাফিলতিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এরআগে গত ২৬ আগস্ট যশোরে টানা সর্বোচ্চ ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলো। এর আগে গত ৬ জুলাই যশোরে মৌসুমের সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, তিনদিনের টানা বর্ষণে গোটা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভারী বর্ষণে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচেপড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের।
শহরের অন্তত ৩০টি সড়কে পানি জমে আছে। রেল রোডের ফুড গোডাউন থেকে টিবি ক্লিনিক মোড়-আশ্রম মোড় হয়ে মহিলা মাদরাসা পর্যন্ত, খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপপট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শহরের ছোট ছোট সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার নোংরা পানি উপচে পড়েছে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানির ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও।
Advertisement
দুপুরের এ বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন শিক্ষার্থীরা। পৌরসভার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শংকরপুর চোপদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, তাদের গোটা এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পাানি উঠেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটু পানি। আগে ড্রেনের মাধ্যমে এই পানি হরিণার বিলে নেমে যেতো। এখন সেখানে বড় বড় বিল্ডিং হওয়ায় ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। পানি নামতে পারছে না। শহরের পানি এই এলাকায় এসে জমা হচ্ছে।
বটতলা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, আগে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে মেডিকেল কলেজ হওয়ার পর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে এই এলাকা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে।
শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুমা বেগম। তিনি বলেন, ‘এলাকার কয়েকশ বাড়িতে পানি উঠেছে। আমাদের বাড়ির নিচতলায় হাঁটুপানি। টিউবওয়েলের কিছু অংশ পানিতে ডুবে আছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছি আমরা। রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় রান্নাও বন্ধ হয়ে গেছে।’ শহরের খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটুসমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। এই সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আবার এই পানির মধ্যে দিয়ে রিকশা, ইজিবাইক যেতে রাজি না হওয়ায় অনেককে জুতা হাতে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে।
Advertisement
একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, ‘যশোর পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ড্রেনগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। আবার ড্রেনগুলোও নাগরিকরা ডাস্টবিনে পরিণত করেছেন। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ বেজপাড়া কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, তাদের এলাকার ড্রেন উপচে নোংরা পানি রাস্তায় থই থই করছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
মিলন রহমান/এসআর/জিকেএস