আজ দুপুরেই বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। এরই মধ্যে চেন্নাই পৌঁছে যাওয়ার কথা নাজমুল হোসেন শান্তদের।
Advertisement
ভারত সফরের লক্ষ্য রোহিত শর্মার দলের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইতে শুরু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রথম টেস্ট ম্যাচ। ক্রিকেট অনুরাগীরা অধীর আগ্রহে সেই সিরিজ দেখার অপেক্ষায়।
কিন্তু এর মধ্যেও একটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্রিকেট অনুরাগীদের আগ্রহের কমতি নেই। তাদের সবার একটাই কৌতূহলি প্রশ্ন, ‘তামিম ইকবালের খবর কি? দেশসেরা ও সফলতম ওপেনার কি আবার জাতীয় দলে ফিরবেন? যদি ফেরেন, তাহলে কোন ফরম্যাটে? টেস্ট-ওয়ানডে দুটি ফরম্যাটেই কি আবার মাঠে ফিরবেন এ বাঁ-হাতি ওপেনার? নাকি এক ফরম্যাটে আবার জাতীয় দলের হয়ে ব্যাট হাতে নামতে দেখা যাবে চট্টগ্রামের খান পরিবারের এ কনিষ্ঠ সদস্যকে?
এটাই শেষ নয়। তামিমকে নিয়ে আরও বড় একটি গুঞ্জন আছে। অনেকেই মনে করেন, খেলোয়াড়ি জীবন শেষ। তামিম আর মাঠের ক্রিকেটে ফিরবেন না। খেলা ছেড়ে তিনি আগামীতে ক্রিকেট ব্যবস্থপনায় জড়িয়ে পড়বেন। তাকে হয়তো বোর্ড ব্যবস্থাপক তথা পরিচালক হিসেবে দেখা যেতে পারে। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, পদত্যাগ করা পরিচালক কাম গেম ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজনের জায়গায় তামিমকেই পরিচালক করে সুজনের খালি চেয়ারে বসানো হবে।
Advertisement
তামিম আসলে কি করবেন? মাঠে ফিরবেন নাকি ব্যাট, প্যাড ও গ্লাভস উঠিয়ে বোর্ড পরিচালক হিসেবে দেশের ক্রিকেট ব্যবস্থাপনায় নাম লেখাবেন? এর উত্তর দেবে সময়।
তবে তামিমকে নিয়ে এমন চিন্তা অমূলক নয়। কারণ, ফারুক আহমেদ বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে তামিম ইস্যুতে দু’রকম কথা বলেছেন। বিসিবি সভাপতির প্রথম কথা ছিল, ‘আমি চাই তামিম অন্তত আরও দুই বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলুক।’
সেটা কোন ফরম্যাটে? তা তামিমের ওপর ছেড়ে দিয়ে ফারুক বলেন, ‘টেস্ট, ওয়ানডে দুটিই হতে পারে। তবে ৫ দিন খেলার জন্য যে পরিমাণ শারীরিক ধকল ও কষ্ট সহ্য করতে হয়, তামিম তা নিতে পারবে কি না! সেটার ওপর নির্ভর করবে, তার টেস্টে ফেরা। না হয় ওয়ানডে খেলবে।’
এমন কথা বলার পাশাপাশি বিসিবি প্রধান আরও একটি মন্তব্য করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তামিম যদি না খেলে বোর্ডে আসতে চায়, তাহলেও তিনি স্বাগত জানাবেন। তামিমকে বোর্ডে চেয়ে ফারুক বলেন, ‘তামিমের মতো ছেলে বোর্ডে আসলে ক্রিকেটেরই মঙ্গল হবে। কারণ, তামিম খুবই বুদ্ধিমান। তার ক্রিকেট বোধ, জ্ঞান প্রবল।’
Advertisement
দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন ও মঙ্গলে তামিমের মতো বুদ্ধিমান ও ক্রিকেটবোধসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন ফারুক। বিসিবি সভাপতির এমন মন্তব্য ছাড়া আরও কয়েকটি ঘটনা বলে দিচ্ছে তামিম বোর্ডে এলে আসতেও পারেন।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যেদিন প্রথম হোম অব ক্রিকেট পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, ঠিক সেদিন তার সাথে ছিলেন তামিম ইকবাল। আর তখনই প্রশ্নটা উঠেছিল বিষয়টা নিয়ে। তামিম ইকবাল কেন কি কারণে এবং কোন পরিচয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বোর্ড ও শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে ছিলেন?
তবে কি তামিম খেলা ছেড়ে বোর্ডে আসবেন? একই প্রশ্ন আরও জোরালো হলো গত বৃহস্পতিবার বিকেলে। এদিন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে একান্তে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি। ওই সময় ভারতগামী জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে উপস্থিত ছিলেন তামিমও।
তিনি এখন কোনো ফরম্যাটেই জাতীয় দলের সঙ্গে নেই। তারপরও তার ওই বৈঠকে থাকার কারণ নিয়েও তৈরী হয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকে ধরেই নিয়েছেন, তামিম বোর্ড পরিচালক হিসেবে আত্মঃপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন। তাই বিসিবি প্রধানের সাথে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বৈঠকে তাকে দেখা গেছে।
যদিও পরে জানা গেছে, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলেছেন ফারুক আহমেদ। সেখানে বিপিএল, ডিপিএলসহ ঘরোয়া ক্রিকেট আসর নিয়ে ক্রিকেটারদের মতামত শোনেন বোর্ড প্রধান। ওই বৈঠকে নিজের ইচ্ছে-আকাঙ্খার কথাও প্রকাশ করেন ফারুক। তামিম বোর্ডে আসছেন নাকি? এমন প্রশ্নর জবাবে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘তামিমতো এখনো ক্রিকেটারই । অবসরতো নেয়নি।’
বোর্ড সভাপতির মন্তব্যের পরও তামিমের ব্যাপারটা এখন ধোঁয়াশে। দেশসেরা এ ওপেনারের ভবিষ্যত কী? তা ক্রিকেট পাড়ায় এক আলোচিত ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে তামিম নিজেও কিছু বলছেন না। তাই ব্যাপারটা আরও অন্যরূপ ধারণ করেছে।
তবে খেলা ছেড়ে তামিমের বোর্ড পরিচালক হওয়ার কথা যারা বলছেন, তারা হয়ত ঠিক হিসেব-নিকেশ না করেই এমন মন্তব্য করছেন। বলে রাখা ভাল, তামিম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে খেলা ছাড়ার ঘোষণা দেননি। সে কারণে তিনি ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর নন। আর কাউন্সিলর না হলে বোর্ড পরিচালক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এখন তামিমকে বোর্ড পরিচালক হতে হলে কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে। সবার আগে ক্রিকেট মাঠ থেকে সরে আসতে হবে। খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় বিসিবির কাউন্সিলর হওয়ার বিধান নেই। সেক্ষেত্রে বিভাগ-জেলা পর্যায়, না হয় ঢাকার ক্লাব কোটা কিংবা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের কোটায় বোর্ডে আগে কাউন্সিলর হতে হবে।
এরমধ্যে ঢাকার কোনো ক্লাবের কাউন্সিলর হলে বোর্ড পরিচালক হওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ বেশি। কারণ ঢাকার ক্লাব কোটায় যারা নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বআধীন বোর্ডের পরিচালক ছিলেন, তারা কেউ পদত্যাগ করলে শুধু পরিচালক পদে সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কাউন্সিলর হয়ে তারপর বোর্ড পরিচালক হতে পারবেন তামিম।
এদিকে বিসিবি পরিচালক পদ ছাড়া তামিম ইকবালকে আরও একটি পদে দেখা যেতে পারে। ক্রিকেট পাড়ায় মৃদু গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে, তামিম ইকবালকে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের উপদেষ্টা হিসেবেও বোর্ডে দেখা যেতে পারে।
বলে রাখা প্রয়োজন, বিসিবি প্রধানের উপদেষ্টা হতে হলে কোনরূপ কাউন্সিলর হওয়ার দরকার পড়বে না। ক্রিকেট সংশ্লিস্ট যে কেউ বোর্ড প্রধানের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হতে পারবেন। বিশ্বের অনেক ক্রিকেট বোর্ডেই এমন নজির আছে।
অনেক নামী সাবেক ক্রিকেটার সে দেশের বোর্ড সভাপতির বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে এমন নজির আছে বেশ। সর্বশেষ ওয়াকার ইউনুসের পিসিবি প্রধানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার কথা ছিল। তাকে পিসিবি সভাপতি মাহসিন নাকভির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগও দেয়া হয়েছিল। অবশ্য ওয়াকার সে পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কাজেই তামিম ইকবালও একইভাবে বর্তমান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের উপদেষ্টা হতে পারেন এবং উপদেষ্টা হতে হলে আর কাউন্সিলর হওয়া লাগবে না। তখন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ওপেনার কিংবা ক্রিকেটার পরিচয়ই যথেষ্ঠ। আর তামিম ইকবালের ক্রিকেট জ্ঞান, বোধ, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা নিয়েতো আর কোনো প্রশ্ন নেই।
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মার্ট ক্রিকেটার হিসেবে গণ্য হন তামিম। দায়িত্ব পাওয়ার পর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও বলে রেখেছেন, খেলা ছেড়ে তামিম যদি দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে চায়, তাহলে তাকে স্বাগতঃ জানাবেন তিনি।
তামিমের মত ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন স্মার্ট পারসোনালিটিকে বোর্ডে আগাম আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছেন ফারুক। বলেছেন, ‘তামিমের মত স্মার্ট, ক্রিকেট বোধ-বুদ্বিসম্পন্ন ক্রিকেট পারসোনালিটি বোর্ডে আসলে দেশের ক্রিকেটই উপকৃত হবে। তাই শেষ পর্যন্ত তামিম বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এআরবি/আইএইচএস