বিনোদন

এই চিঠি চাটুকারিতার মধ্যেই পড়ে

নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ের একটি আবেদন। ২০১৩ সালে পূর্বাচলে একটি প্লটের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। গত দশ বছরে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকবার ভাইরাল হয় সেই চিঠি। গতকাল শেখ হাসিনা ও তানভীর নামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক আওয়ামী লীগ কর্মীর ফোনালাপ ফাঁসের পর জয়ের চিঠিটি আবারও ভাইরাল হয়েছে। তবে সেই চিঠি প্রসঙ্গে সরল স্বীকারোক্তিসহ জয় জানিয়েছেন, এই চিঠি চাটুকারিতার মধ্যেই পড়ে।

Advertisement

প্লটের জন্য আবেদনে শেখ হাসিনাকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ নেত্রী ও আদর্শ মা সম্বোধন করে তিনি লিখেছেন, ‘আপনার সুযোগ্য পুত্রের নামের আরেক পুত্র শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সালাম রইল আপনার প্রতি। আমি জয়, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নায়ক (টিভি ও চলচ্চিত্র)। আপনার দোয়ায় গত ১৭ বছর ধরে আমি বাংলাদেশের জনগণের বিনোদনের অন্যতম উৎস হয়ে আছি টিভি পর্দায় এবং সুস্থ চলচ্চিত্রে।’

এ উপস্থাপক আরও লিখেছেন, আপনি অত্যন্ত দরদি এবং বাংলার মানুষের বিপদের বন্ধু। শুধু তাই নয়, গত নির্বাচনকালীন সময়ে আপনি যে বলিষ্ঠ সাহসী এবং জ্ঞানদীপ্ত আদর্শের উপর বলীয়ান ছিলেন তা আমাদের মতো মানুষকে আজীবন আপনার নেতৃত্বকে স্যালুট জানানোর অঙ্গীকার করিয়েছে। মা, আপনার নিকট একজন শিল্পীর আবেদন, আমার সমসাময়িক সকল শিল্পীই পূর্বাচলে ১০ কাঠা ৫ কাঠা প্লট পেয়েছে। আমি দেশের বাইরে শুটিংয়ে থাকার জন্য অ্যাপ্লাই করতেই পারিনি। পরবর্তীতে ঝিলমিলে অ্যাপ্লাই করলে লটারিতে তা পাইনি।’

মূলত প্রতি অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করায় জয়কে ‘তেলবাজ’ আখ্যায়িত করেছেন নেটিজেনরা। পুরাতন চিঠি নতুন করে ভাইরাল করায় আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিনেতা জয়। তিনি লিখেছেন, ‘অবশ্যই এই চিঠি চাটুকারিতার মধ্যেই পড়ে। এর জন্য অপমান আমার প্রাপ্য। কিন্তু দেখেন, শাস্তিটা বেশি দিয়ে ফেলবেন না। আল্লাহ তবে আপনাদেরও ক্ষমা করবে না। আল্লাহ যে আছেন এবং যথাসময়ে পাপের শাস্তি হয়, তা আমরা তো সবাই বুঝে গেছি, তাই না? ঘৃণা না ছড়িয়ে শান্ত হন। সবাই মিলে ভালো থাকি, চলুন সবাই যার যার ভুল সংশোধন করি।’

Advertisement

ওই পোস্টে জয় জানিয়েছেন, সে রকম বড় কোনো অপরাধ তিনি করেননি। তা ছাড়া ওই প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘আলো আসবে গ্রুপে পান নাই। ইউটিউবারদের ষড়যন্ত্রে পান নাই। তাই বলে আমাকে ছেড়ে দেবেন কেন? ২০১৪ সালের একটি চিঠি এই নিয়ে চৌদ্দবার ভাইরাল করলেন। সাবেক সরকারের কাছ থেকে অনেকেই জমি নিয়েছেন। সেই প্লটগুলো ১৩-এ ধারা। এই সরকার ইতিমধ্যে সব প্লট বাতিল ঘোষণা করেছে। তারপরও ফেসবুকে এই চিঠি নিজস্ব লোকেরা পোস্ট করছেন, আমার নম্বর ভাইরাল করছেন এবং আমাকে সামাজিকভাবে হেনস্থা করছেন।’

আরও পড়ুন: সমন্বয়কের বার্তা দিলেন জয়, শিল্পীরা মানুষের ঘৃণার মুখে থাকবেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে গত ২৮ আগস্ট একটি ভিডিও পোস্ট করেন জয়। সেখানে শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি জানান, তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে নতুন বাংলাদেশে একটি বিবৃতি দেওয়া উচিত। দল যে কেউ করতে পারেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে যারা ছাত্রদের বিপক্ষে ফ্রন্ট লাইনার ছিলেন, তাদের উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমি ছাত্রছাত্রীদের বিপক্ষে কখনই ছিলাম না। আমি চুপচাপ ছিলাম। বুদ্ধিদীপ্ত স্ট্যাটাস দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যে স্ট্যাটাসে সরকারকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল, দাবি মেনে নেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তেসরা আগস্ট শাহবাগে যখন ছাত্রছাত্রীরা একত্র হয়েছিল, দেখেছি একটি গান ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা” গাইছেন সবাই। আমি ওই গানটি শেয়ার দিয়েছি। এরচেয়ে বেশিকিছু আমি করতে পারিনি। এ জন্য আমি দুঃখিত, লজ্জিত, অনুতপ্ত। নতুন বাংলাদেশে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।’

২০০৭ সালে ‘গোধুলী লগ্নে’ নাটক দিয়ে টেলিভিশনে অভিষেক হয় জয়ের। এটিএন বাংলার সেলিব্রিটি টক-শো ‘সেন্স অফ হিউমার’, এশিয়ান টিভির ‘কমনসেন্স’ এবং একুশে টেলিভিশনের ‘উইথ নাজিম জয়’ অনুষ্ঠানগুলি উপস্থাপনা করেছেন তিনি। বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘৩০০ সেকেন্ড’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন তিনি।

আরএমডি/এএসএম

Advertisement