ধর্ম

রিয়া ও নেফাক থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা

রিয়া অর্থ লোক দেখানো নেক আমল করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং মানুষকে দেখানোর জন্য, সুনাম অর্জন করার জন্য নেক আমল করা। আর নেফাক মানে অন্তরে কুফরি ও অবিশ্বাস রেখে মুখে ঈমান প্রকাশ করা জাগতিক লাভের জন্য বা মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য।

Advertisement

রিয়া ও নেফাক এমন ব্যধি যা মানুষকে ঈমানের বাইরে ঠেলে দেয়। রিয়াকে হাদিসে শিরকের সমতুল্য বলা হয়েছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন,

أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

আমি শরিককদের মধ্যে শিরক থেকে সবচেয়ে বেশি অভাবমুক্ত। যদি কেউ কোন আমল করে এবং তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরীক করে, তাহলে আমি তাকে ও তাঁর শিরককে তাদের অবস্থায়ই ছেড়ে দেই। (সহিহ মুসলিম: ৭২০৫)

Advertisement

আর মুনাফিকরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাফের। কোরআনে এসেছে মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا

নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সুরা নিসা: ১৪৫)

তাই এই দুই ব্যাধি যেন আমাদের আক্রান্ত করতে না পারে, আমাদের ঈমান ও আমল নষ্ট করে দিতে পারে সেজন্য সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহর সাহায্য ও তওফিক ছাড়া নিজের সামর্থ্য ও শক্তিতে হেদায়াতের ওপর অটল থাকা, শয়তানের ধোঁকা থেকে আত্মরক্ষা করা ও নেক আমল করার সামর্থ্য আমাদের নেই।

Advertisement

কোরআনে আল্লাহ তাআলা দ্বীনের ওপর অবিচলতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে আল্লাহ আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন,

رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ

উচ্চারণ: রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাব লানা মিনলাদুনকা রাহমাহ ইন্নাকা আনতাল-ওয়াহহাব

অর্থ: হে আমাদের রব, আপনি হেদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)

নবিজি (সা.) থেকে আরেকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে যে দোয়ায় তিনি এ দুই ব্যাধিসহ অন্যান্য গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। উম্মে মা’বাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া করতে শুনেছি,

اللَّهُمَّ طَهِّرْ قَلْبِي مِنَ النِّفَاقِ وَعَمَلِي مِنَ الرِّيَاءِ وَلِسَانِي مِنَ الْكَذِبِ وَعَيْنِي مِنَ الْخِيَانَةِ فَإِنَّكَ تَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ

উচ্চারণ: আল্লহুম্মা ত্বাহহির কালবী মিনান-নিফাকি ওয়া আমলী মিনার-রিয়ায়ি ওয়া লিসানী মিনাল কাযিবি ওয়া আয়নী মিনাল খিয়ানাতি ফাইন্নাকা তা’লামু খয়িনাতাল আইউনি ওয়ামা তুখফিস-সুদূর

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরকে মুনাফিকি হতে, আমার কাজকে লোক দেখানো হতে, আমার জবানকে মিথ্যা বলা হতে এবং আমার চোখকে খেয়ানত করা হতে পাক পবিত্র করো। তুমি অবশ্যই জানো চোখ যে খেয়ানত করে এবং অন্তরসমূহ যা গোপন করে। (বাইহাকি ফিদ-দা‘ওয়াতিল কাবীর: ২৫৮)

রিয়া ও নেফাক থেকে বেঁচে থাকার জন্য কোরআনে ও হাদিসে বর্ণিত এ ‍দুটি দোয়া আমরা বেশি বেশি পাঠ করতে পারি।

ওএফএফ/এমএস